খাগড়াছড়ি দর্শনীয় স্থান – আলুটিলা, রিছাং ঝর্না, ভ্রমন খরচ সহ ভ্রমন গাইড

পাহাড়, বন,সমতল, ঝর্না, ঝিরি এসব প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতা নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা হাত বাড়িয়ে থাকে পর্যটকদের দিকে।বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা খাগড়াছড়ি। এখানে থাকা ছোট বড় সব ধরনের পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিনিয়ত ঘুরতে আসে দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটক।পাহাড়,ঝর্না, ঝিরি গুহা ছাড়াও অসংখ্য এখানে আছে সমতল ভূমির বন।প্রাকৃতিক এই বৈচিত্রতা আপনার মন কাড়বে।

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার উপায়

ঢাকা টু খাগড়াছড়ি রুটে হানিফ এন্টারপ্রাইজ ও সেন্টমার্টিন হুন্দাই রবি এক্সপ্রেস নিয়মিত চলাচল করে। এই বাস সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি সরাসরি ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি পৌছুতে পারবেন। ২০২৩ সালে ঢাকা টু খাগড়াবাড়ি নন এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে।

কী আছে খাগড়াছড়ি?

খাগড়াছড়ি জেলায় আছে বাংলাদেশের বেশ করেয়কটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক প্রতিনিয়ত প্রকৃতির টানে এখানে চলে আসে।বিশেষ করে শীতের সময় পর্যটকদের ভীড় যেন উপচে পড়ে খাগড়াছড়িতে।চলুন কিছু সময়ের জন্য ঘুরে আসি খাগড়াছড়ির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে।

১. আলুটিলা পাহাড় ও গুহা – খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থান

খাগড়াছড়ির মূল আকর্ষণ আলুটিলা পাহাড় ও পাহাড়ে অবস্থিত গুহা।অনেক আগে থেকেই আলুটিলা পাহাড়ে অবস্থিত গুহা পর্যটকদের নজর কেড়েছে।সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এই পাহাড়ের উচ্চতা ৩০০০ ফুট।বর্তমানে শুধু গুহাই এই পাহাড়ের মূল বিষয় নয় এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে অনেক গুলো পর্যটন স্পট।এর মধ্যে কুঞ্জছায়া ও র্বর্ন তোড়ন উল্লেখযোগ্য। কুঞ্জছায়া থেকে আপনি খাগড়াছড়ি শহর টা এমন ভাবে দেখতে পাবেন যে নিজেকে পাখি মনে হবে।


আলুটিকা তথা আরবারী পাহাড়ে অবস্থিত বিখ্যাত গুহাটিকে স্থানীয়রা দেবতার গুহা বলে।গই গুহাটি খুবই অন্ধকার এবং শীতল।আপনার হাতে থাকা মশালটিই হবে আলোর একমাত্র উৎস। পায়ের নিচে ভেজা স্যাঁতসেঁতে পাথর।গুহার নিচ দিয়ে বয়ে গেছে ঝর্না।পুরো গুহাটির দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট।গুহার প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকে শেষ প্রান্ত থেকে বেরোতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা হবে এই আলুটিয়া গুহা পরিদর্শন। 


গুহা পরিদর্শন করতে হলে আপনাকে টিকেট কেটে ঢুকতে হবে এবং কিনে নিতে হবে একটি মশাল।বেশি নিরাপত্তার জন্য চর্ট ও মোবাইল সাথে নিতে পারেন।
বান্দরবান শহর থেকে লোকাল বাস বা চান্দের গাড়ি পাবেন আলুটিলা আসার জন্য। অথবা সিএনজি করেও আসতে পারেন। এসব গাড়ি আপনাকে সরাসরি আলুটিলা পৌছে দেবে।
চান্দের গাড়ি হলো একধরনের খোলা জীপ।চট্টগ্রামে পর্যটকদের কাছে সবথেকে জনপ্রিয় যানবাহন হলো এই চান্দের গাড়ি।

২. মাতাই হাকর

খাগড়াছড়ি জেলার সবথেকে আকর্ষণীন পর্বত হলো মাতাই হাকর।মাতাই হাকরের একটি অংশই আলুটিলা নামে পরিচিত।এই পর্বতের উপর থেকে পুরো খাগড়াছড়ি এলাকাটি দেখা যায় বলেই এটি অনেক বেশি জনপ্রিয়। মাতাই হাকর নামক বিশাল এই পর্বতটি বান্দরবনের উল্লেখযোগ্য একটি পর্যটনকেন্দ্র। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এই পর্বতের উচ্চতা প্রায় ৩০০০ ফুট।খাগড়াছড়ি জেলার প্রবেশপথেই এই পর্বত টির অবস্থান। 
এই পর্বতে চাকমা ও ত্রিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের বসতি। পর্বত আরোহনের সময় আপনি এসকল ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর জীবনধারার নানা বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

খাগড়াছড়ি সদর থেকে চান্দের গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি চলে আসতে পারবেন মাতাই হাকরে।এখানে সারাদিন ট্রেকিং করে আপনাকে অবশ্যই খাগড়াছড়ি ফিরে যেতে হবে।খাগড়াছড়িতে থাকার জন্য পেয়ে যাবেন কটেজ অথবা বিলাসবহুল মোটেল।সেখানে খাওয়া দাওয়ার সুব্যবস্থা আছে।

৩. তুয়ারি মাইরাং

খাগড়াছড়িতে নতুন আকর্ষণ তুয়ারি মাইরাং ঝর্নার। এই ঝর্নার সন্ধান মিলেছে খুবই সম্প্রতি। প্রায় ১০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট এই ঝর্নায় যাওয়ার পথও কিন্তু খুব একটা সহয নয়।তবুও প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক এই দুর্গম পথ অতিক্রম করে দেখতে চলে যায় প্রকৃতির অপার বিষ্ময়। লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে অবস্থিত হওয়ার এই ঝর্নার পাশে গেলে মনে হবে আপনি পৃথিবীর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে গেছেন অন্য এক মায়াময় ভূবনে।


তুয়ারি মাইরাং কথাটির মানে হলো – ” থালার আকৃতি”। ঝর্নার পাদদেশে থালার আকৃতির পাথর আছে বলে এই ঝর্নার নামকরণ করা হয়েছে ” তুয়ারি মাইরাং তথা থালার আকৃতি।

খুব সম্প্রতি এই ঝর্নার খোজ পাওয়া গিয়েছে বলে এখনও এর যাত্রা পথে কোনে সংস্কারের ব্যবস্থা হয়নি। ফলেই এই ঝর্নার দেখতে যেতে চাইলে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ভয়ংকর দুর্গম রাস্তা।চ্যালেঞ্জিং এডভেঞ্চার প্রেমি পর্যটকদের জন্য অসাধারণ একটি ভ্রমণ হবে এটি।


তুয়ারি মাইরাং ঝর্না খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার সীমান্তপাড়ায় অবস্থিত।খাগড়াছড়ি জেলা থেকে নয়মাইল- সীমান্তপাড়া পর্যন্ত গাড়ি করে যেতে পারবেন। এরপর বাকিটা পথ যেতে হবে পায়ে হেটে। এখান থেকে অবশ্যই গাইড নিয়ে নিবেন।স্থানীয়রাই গাইড সেবা প্রদান করে থাকে। সীমান্তপাড়া থেকে পায়ে হেটে ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে ১ ঘন্টা সময় লাগবে।পাড়ি দিতে হবে পাহাড়ি কাদ,ঝিরি,মাঝে মাঝে বন্য লতা বেয়ে পারি দিতে হবে পাহাড়ি খাদ।ঝিরি পথে সূর্যের আলো পৌছুতে পারে না বিধায় এখানকার পরিবেশটা একদমই গা ছমছমে। যাত্রা পথে দেখতে পাবেন পাহাড়ি আদিবাসীদের গ্রাম ও জুম চাষ পদ্ধতি। 
কোনো ধরনের থাকা বা খাওয়ার ব্যবস্থা এখানে পাবেন না।তাই যাওয়ার সময় অবশ্যই সাথে কিছু শুকনো খাবার রাখবেন।সারাদিনের এডভেঞ্চার শেষ করে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতে হবে।

৪. জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক

খাগড়াছড়ি শহরের মধ্যে অবস্থিত অন্যতম বিনোদন পার্ক হলো হর্টিকালচার বিনোদন পার্ক।খাগড়াছড়িতে ঘুরতে এসে একটু প্রশান্তিতে একটা দিন কাটাতে চাইলে চলে আসতে পারেন জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কে। 
খাগড়াছড়ি শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের ওপর ২২ একর জমি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই পার্কটি।


হর্টিকালচার পার্কের সবথেকে বড় আকর্ষন হলো ঝুলন্ত ব্রিজ। মূলত ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতেই দর্শনার্থীরা ভীর জমায় এই পার্কে।পাহাড়ের ওপর স্থাপিত এই পর্যটনকেন্দ্রটির পশ্চিম দিক থেকে রাঙামাটি জেলার ভিউটা অনেক বেশি সুন্দর। ঝুলন্ত ব্রিজ ছাড়াও একানে দেখার মতো ও উপভোগ করার মতো আরও আছে অসংখ্য জিনিস।যেমনঃ ওয়াচ টাওয়ার,লেক,ঝর্ণা, লাভ পয়েন্ট, বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইড, দোলনা ইত্যাদি। 


একানে দেখতে পাবেন অসংখ্য প্রজাতির ফল দেশি বিদেশি ফল গাছ।সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত এই পার্কে অবস্থান করা অনুমতি দেয়া হয়।এই পার্কে এসে ক্যামেরাবন্দী করে নিয়ে যেতে পারবেন খাগড়াছড়ি ভ্রমনের চমৎকার কিছু স্মৃতি। 


খাগড়াছড়ি শহর থেকে রিকশা বা ইজি বাইকে করে খুব সহযেই চলে আসতে পারেনন জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কের প্রবেশ গেটে।রাঙামাটি ভ্রমনের খুবই সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা হবে এই ঝুলন্ত ব্রিজ খ্যাত হর্টিকালচার পার্কে।

৫. তকবাক হাকড়

খাগড়াছড়ি ভ্রমন মানেই পাহাড়ি গুহা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা। খাগড়াছড়ির বিখ্যাত গুহা গুলের মধ্যে অন্যতম একটি গুহা হলো “তকবাক হাকড়”,যার মানে বাদুড়ের গুহা।উঁচু দুটি পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত বলে দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটি কোনো প্রাগৈতিহাসিক স্থাপনা।গুহার সামনে আছে বড় চাতাল।ভেতরে ঢুকলে মনে হবে আপনি পৃথিবী ছেড়ে অন্য এক জগতে চলে এসেছেন।চারদিকে শুধু অন্ধকার।আলোর উৎস হিসেবে থাকবে শুধুমাত্র আপনার হাতে থাকা মশাল।এডভেঞ্চার প্রেমিদের জন্য খুবই রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি।

“তকবাক হাকড়” খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরং ইউনিয়নের আটমাইল নামক স্থানে অবস্থিত।
তকবাক হাকর যেতে হলে আপনি পুরোটা পথ গাড়ি করে আরামে যেতে পারবেন না।আপনাকে পাহাড়ি পথ পায়ে হেটে পাড়ি দিতে হবে।খাগড়াছড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে দিঘীনালা মূল সড়ক ধরে আগাতে হবে।দিঘীনালা সড়ক পার করে পাবেন ইট সিলিং এর রাস্তা। ইট সিলিং এর রাস্তা শেষ হলে আর গাড়ি চলবে না।বাকি রাস্তাটুকু আপনাকে পায়ে হেটে ট্রেকিং করতে হবে।ইট সিলিং এর রাস্তা শেষ হলে দুই কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেটে যেতে হবে আপনার বহু কাঙ্খিত ” তকবাক হাকর” গুহায়।

৬. তৈদুছড়া ঝর্না

খাগড়াছড়ি মানেই চ্যালেঞ্জিং এডভেঞ্চার। আপনি যদি চ্যালেঞ্জিং এডভেঞ্চারের প্রস্তুতি নিয়ে খাগড়াছড়ি বেড়াতে যান তাহলে আপনার জন্য উপযুক্ত পর্যটন এড়িয়া হলো ” তৈদুছড়া ঝর্না “।খাগড়াছড়ির সবথেকে অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই তৈদুছড়া ঝর্না। 


অন্যান্য ঝর্ণার মতো সোজা উপর থেকে ঝর্নার পানি নিচে নামে না।সে পাহাড়ের ওপর দিয়ে ঝর্ণাটি প্রবাহিত হয়, সেখানে আছে অসংখ্য সিড়ির মতো পাথর।পানি প্রথমে এসে পড়ে সেই সব সিড়ির বুকে,সেখান থেকে ছিটকে নিচে নামে ঝর্নার পানি।পানি প্রবাহের এই ব্যতিক্রম ধারাই এই ঝর্নার বিশেষত্ব। প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে ঝর্নার পানি নিচে নেমে আসে।


তৈদুছড়া ঝর্নার পাশেই আছে আরেকটি ঝর্ণা, নাম তার ” থাংঝাং ঝর্ণা”।এই ঝর্না চলার পথে সৃষ্টি করেছে ঝিরিপথ।সেই ঝিরি থেকেই তৈদুছড়া ঝর্নার সৃষ্টি।

তৈদুছড়া ঝর্না দেখতে যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি থেকে বাসে করে চলে আসতে হবে দিঘীনালায়।জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৬০ টাকা এবং দিঘীনালা পৌছুতে সময় লাগবে ৪৯ মিনিট।দীঘিনালায় পৌছে পাহাড়ে ভ্রমনের জন্য অনুমতি নিতে হবে।


এরপর আপনাকে অবশ্যই একজন গাইড ভাড়া নিতে হবে।দিঘীনালা থেকে গাড়ি বা মোটরসাইকেলে করে চলে আসতে হবে থাপ্পাপাড়া,পোমাংপাড়া অথবা জামতলী। এই পর্যন্তই আপনার গাড়িতে চলাচল সমাপ্ত। পাহাড়ি রাস্তায় হাটা শুরু করতে হবে।
কোথাও পড়বে পাহাড়ি খাদ, কোথাও কোমর বা বুক সমান পানি পেড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে।৩ ঘন্টা পাহাড়ি দুর্গম রাস্তায় হাটার পর দেখা মিলবে তৈদুছড়া ঝর্নার।একবার ঝর্নার কাছাকাছি পৌছুতে পারলে আপনার পুরো রাস্তার ক্লান্তি নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে
আসার সময় অবশ্যই শুকনো খাবার, শুকনো কাপড় সাথে নিয়ে আসবেন।সন্ধ্যার মধ্যে আবার ফিরে যেতে হবে দিঘীনালায়।

৭. মাতাই পুখিরি

খাগড়াছড়ি পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মাতাই পুখিরি খুব জনপ্রিয় এবং এখানে যাওয়ার রাস্তাও খুব একটা দুর্গম নয়।মাতাই পুখিরি মূলত একটি প্রাকৃতিক হ্রদ যা কিনা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৫০০ ফুট উপরে অবস্থিত। এই হ্রদের বিশেষত্বই হলো এর উচ্চতা।মাতাই পুখিরি হ্রদটি মাতাই তুয়ারি নামেও স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। 


মাতাই পুখিরি দৈর্ঘ্যে দেড় হাজার ফুট এবং প্রস্থ ৬০০ ফুট।এতো উচুতে অবস্থান করার পরেও এই সুবিশাল হ্রদটির পানি কখনোই শুকিয়ে যায় না।বরং বর্ষার সময় এই হ্রদটিতে পানির পরিমান বেড়ে গিয়ে এর সৌন্দর্য হাজার গুনে বাড়িয়ে তোলে।এত উচুতে অবস্থািত বিশাল এই জলধারার সামনে দাঁড়ালে আপনার মন ভালো না হয়ে আর উপায় কি।প্রকৃতির বিশাল জলরাশিতে হারিয়ে যাওয়ার মতো অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা এই মাতাই পুখিরি।

খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার নুনছড়ি মৌজায় এই সুবিশাল হ্রদটি অবস্থিত। চান্দের গাড়িতে করে আপনি মাতাই পুখিরি যেতে পারবেন। খাগড়াছড়ি থেকে চান্দের গাড়ি নিয়ে নুনছড়ি হয়ে ” খাগড়াছড়ি – মহালছড়ি – রাঙামাটি ” সড়কের কাছে নামতে হবে।এখান থেকে আপনাকে উপরের দিকে উঠতে হবে পায়ে হেটে। ১৮০০ টি সিড়ির ধাপ পার হয়ে উপরে ওঠার পর সন্ধান পাবেন বিশাল এই জলরাশির।

মাতাই পুখিরি দেখতে গিয়ে রাতে থাকার জন্য আশেপাশে কোনো হোটেল বা কটেজ পাবেন না।আপনাকে চলে আসতে হবে দিঘীনালা। এখানে কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাবেন থাকার জন্য। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও হবে এখানে। কিন্তু ভালো মানের হোটেলে থাকতে চাইলে দিনে দিনেই আপনাকে খাগড়াছড়ি ফিরে আসতে হবে।

৮. মায়াবিনি লেক

খাগড়াছড়ি জেলা শহরের খুব কাছাকাছি জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র হলো মায়াবিনী লেক।প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ যেন পুরোটাই ধারণ করে আছে এই লেক।লেকের স্বচ্ছ পানির বুকে ভেসে বেড়ায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।লেকে বোট নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে উপভোগ করতে পারবেন মাছের এই সাতার কাটার দৃশ্য। বিকেলে দেখা পাবেন বুনো হাঁসের দল ও বক।


লেকে ঘোরার জন্য আছে চারটি বোটের ব্যবস্থা। বোট ভাড়া করে পুরো বিকেলটা কাটিয়ে দিতে পারবেন লেকের স্বচ্ছ পানিতে ভেসে ভেসে।লেকে মাঝে মাঝে রয়েছে ছোট ছোট টিলা,টিলার উপরে তৈরি করা হয়েছে বিশ্রামাগার। এই টিলাগুলো থেকে সরাসরি পাহাড়ে যাওয়ার জন্য আছে বাঁশের সাঁকো। বন্ধু বান্ধব বা পরিবার পরিজন নিয়ে প্রকৃতির মাঝে সুন্দর একটি দিন কাটাতে পারবেন এই মায়াবিনী লেকে।পাহাড়ি উঁচু নিচু চল্লিশ একর জমির ওপরে এই লেক অবস্থিত। একতা মৎস্য সমবায় সমিতির উদ্যোগে এই পর্যটন এলাকাটি গড়ে তোলা হয়েছে।

মায়াবিনী লেক যেতে হলে খাগড়াছড়ি থেকে সিএনজি বা মাহিন্দ্রা ভাড়া করে চলে যেতে হবে সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া বাজারে।ভাইবোনছড়া বাজার থেকে পাঁচ মিনিটের পথ পায়ে হাটলেই পৌছে যাবেন কংচাইরি পাড়ায়।অবশেষে দেখা মিলবে মায়াবিনী লেকের মায়ার ভূবনের।

এই পর্যটন এরিয়ায় পিকনিকের জন্য আছে সুন্দর ডেকোরেটেড জায়গা।তাই কেউ পিকনিক গ্রুপে আসলে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে পারবেন এই স্পটটি।
বুকিং এর জন্য যোগাযোগঃ ০১৫৫৩-৬৬৯৫৯৬

৯. রিছাং ঝর্না

খাগড়াছড়ি পর্যটন এলাকার আরেকটি আকর্ষণীয় ঝর্ণা হলো রিছাং ঝর্না। অন্য সব ঝর্না দেখতে গেলে যেমন দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়, এই ঝর্না দেখতে যাওয়ার পথে তেমন কোনো দুর্গম পথ নেই।নিজস্ব গাড়ি নিয়ে গেলে একেবারে ঝর্নার পাদদেশে গিয়ে নামতে পারবেন। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ার জন্য এই ঝর্নার সব পর্যটকদের কাছেই জনপ্রিয়। 


১০০ ফুট উচু থেকে ঝর্নার পানি পতিত হওয়ার শব্দ আপনি অনেক দূর থেকেই শুনতে পাবেন।১০০ ফুট উঁচু থেকে পানি ছিটকে পরে এক পাথরের বুকে সেখান থেকে আরও ১০০ ফুট নিচে সমতলে গড়িয়ে পড়ে এই ঝর্নার পানি।সে যে কি এক অপরূপ দৃশ্য, কেউ না দেখলে উপলব্ধি করতে পারবে না।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপ মারা গ্রামে অবস্থিত এই ঝর্নাটি স্থানীয়দের কাছে সাপ মারা রিছাং ঝর্না নামেও পরিচিত। 


রিছাং ঝর্না যেতে হলে প্রথমে খাগড়াছড়ি থেকে চান্দের গাড়িতে করে আলুটিয়া পৌছুতে হবে।আলুটিলা নেমে আবার বাস,চান্দের গাড়ি অথবা সিএনজি করে ২ কিমি পথ অতিক্রম করে চলে আসতে হবে হৃদয় মেম্বার এলাকায়।হৃদয় মেম্বার এলাকা থেকে রিছাং ঝর্নার দূরত্ব ২ কিলোমিটার। এই পথটুকু বাইক অথবা পায়ে হেটে যেতে হবে। বাইকে গেলে জনপ্রতি ভাড়া নিবে ৫০ টাকা।কিন্তু আসার সময় সেই ভাড়া হয়ে যাবে ১০০ টাকা।ঝর্নার কাছে এসে ২৩৫ ধাপ সিড়ি বেয়ে নামতে হবে এর পাদদেশে। অনুভব করতে পারবেন প্রকৃতির কলকাকলির মনোরম পরিবেশ।

১০. মায়ুং কপাল

মায়ুং কপাল খাগড়াছড়ির পর্যটন এলাকার একটি বিখ্যাত পাতাড়।এই পাহাড়ে ওঠার জন্য আছে কৃত্রিম সিড়ি।মূলত এই সিড়ির জন্যই মায়ুং কপাল পাহাড়টি বিখ্যাত। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এই পাহাড় চুড়ার উচ্চতা ১ হাজার ২০৮ ফুট।এই পাহাড়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস। পাহাড়ের খাদে খাদে আছে অসংখ্য উপজাতি গ্রাম।গ্রামের লোকজনের চলাচলের জন্যই মূলত ২০১৫ সালে এই পাহাড়ের ৩০০ ধাপের এই সিড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে।


মায়ুং কপাল পাহাড়ের সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামার সময় দেখতে পাবেন বেশ কয়েকটা উপজাতির গ্রাম।পাহাড় ভ্রমন করতে এলেন কিন্তু পাহাড়ি খাদে ট্রেকিং করার ঝামেলা পোহাতে হলো না এটাই সবথেকে ইন্টারেস্টিং বিষয়।

খাগড়াছড়ি জেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের মায়ুং কপাল পাড়ায় এই পাহাড়টি অবস্থিত।
মায়ুং কপাল যার আরেক নাম হাতি মাথা,এখানে যেতে চাইলে খাগড়াছড়ি থেকে পানছড়ি যাওয়ার পথে জামতলী যাত্রী ছাউনির সামনে নামতে হবে।খাগড়াছড়ি থেকে জামতলি যাত্রী ছাউনি পর্যন্ত ভাড়া পড়বে মাথাপিছু ২৫ টাকা।


জামতলী থেকে বাম দিকের রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যেতে হবে।পথে পড়বে চেঙ্গী নদী।চেঙ্গী নদী পাড় হয়ে সামনে পড়বে কতগুলো ছড়া ও একটি টিলা।টিলা পাড় হলেই পাবেন কাপতলা এলাকা নামে লোকালয়।কাপতলা এলাকা থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরে সামনে এগোলে পেয়ে যাবেন “মায়ুং কপাল” নামক বিখ্যাত পাহাড়টি।সব মিলিয়ে পায়ে হাটা রাস্তা পেরোতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টা। পাহাড়ি ছড়া ও টিলা পেরিয়ে আসতে হয় বলে রাস্তাটা মোটামুটি দুর্গম বললেই চলে।
আসার সময় অবশ্যই সাথে করে শুকনো খাবার ও পানি নিয়ে আসবেন।পাহাড় ভ্রমণ করে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসবেন খাগড়াছড়িতে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়িতে ঘুরে দেখার মতো আছে অসংখ্য পর্যটন এলাকা। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রই ভ্রমন পিপাসুদের বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকে।তাইতো একবার এলে বারবার ফিরে আসতে ইচ্ছে হয় বন পাহাড়ি ঝর্ণা দ্বারা আবৃত এই প্রকৃতির মাঝে।

Scroll to Top