খাগড়াছড়ির ঠান্ডা ছড়া ভ্রমণ গাইড | যাওয়ার উপায়, থাকা খাওয়ার হোটেল

‘খাগড়াছড়ি’ নামটা শুনলেই পাহাড়, ঝর্ণা, পাহাড়ি ছড়া আর প্রকৃতিক সৌন্দর্যের মুগ্ধতা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়িতে এমনই এক প্রাকৃতিক বিস্ময় নিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে ঠান্ডা ছড়া৷ প্রাকৃতিক এই ছড়াটি মূলত খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ধর্মঘর নামক এলাকায় অবস্থিত।

যাওয়ার পথটাও যে খুব বেশি সহজ তা-ও কিন্তু নয়। তবে আপনি যদি পাহাড় ট্রেকিং করার জন্য শারিরীক ভাবে সক্ষম থাকেন এবং যথেষ্ট এডভেঞ্চার প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে ঠান্ডা ছড়া থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ৬০০ গজ জায়গা নিয়ে বিস্তৃত ছড়ার দুই পাশে উঁচু পাথরের প্রাচীর।

তাই যতোই ভেতরের দিকে যেতে থাকবেন ততোই আবহাওয়া ঠান্ডা হতে থাকবে। ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্যই এই ছড়ার নাম হয়েছে ঠান্ডা ছড়া। খাগড়াছড়ি ভ্রমনে গেলে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর সাথে ঠান্ডা ছড়াকে ভ্রমণ তালিকায় রাখতে পারেন।চলুন দেখে নেই ঠান্ডা ছড়ার প্রকৃতিক সৌন্দর্য, যাওয়ার উপায় ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

ঠান্ডা ছড়া কেন যাবেন?

পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে গা হিম করা এক এডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাইলে যেতে পারেন ঠান্ডা ছড়া। বেশ অনেকটা পথ পাহাড় ট্রেকিং করে পৌঁছাতে হবে এই ছড়ায়। তাহলে একই সাথে পাহাড় ট্রেকিং করাও হবে আবার ঠান্ডা ছড়া ভ্রমনও হবে। পাহাড়ের দেয়ালের পাশ দিয়ে সরু পথে বয়ে চলেছে এই ছড়া।

তার ভেতরে অবিরাম ভাবে বয়ে চলেছে ঝর্ণাধারা। কালো উঁচু নিচু পাথরের ওপর দিয়ে খুব সাবধানে হেঁটে হেঁটে যাওয়ার সময় মনে হবে আপনি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো এক অঞ্চলে চলে এসেছেন। পানির কলকল শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাবেন না।

শারিরীক ভাবে সক্ষম না হলে পাথরের দেয়ালে ঘেরা এই সরু পথ ধরে হাঁটা কষ্টকর। ঠান্ডা ছড়া ভ্রমণের এটাই আসল রোমাঞ্চ। পথের দুই ধারে দেখতে পাবেন বিভিন্ন বুনো ফুল ফুটে রয়েছে।

এগুলো ভেজা স্যাঁতসেঁতে পাথরের গা বেয়ে বেড়ে উঠেছে। প্রকৃতিক এই সৌন্দর্য নিজ চোখে দেখতে পাওয়ার সৌভাগ্য আসলেই সবার হয় না। তাই সুযোগ পেলে অবশ্যই একবার ঘুরে আসা উচিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাজ্য ঠান্ডা ছড়া থেকে।

এছাড়াও ঠান্ডা ছড়া যাওয়ার পথে খাগড়াছড়ির আরও বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র চোখে পড়বে। পুরোটা পথ পাহাড়ি রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া ঠান্ডা ছড়ার খুব কাছেই পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত। হাতে সময় থাকলে সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।

ঠান্ডা ছড়া যাওয়ার উপায়:

ঠান্ডা ছড়া যাওয়ার জন্য প্রথমেই বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে খাগড়াছড়ি উপস্থিত হতে হবে। যদি কোনো জেলা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার ডাইরেক্ট বাস না পাওয়া যায় তবে প্রথমে চট্টগ্রাম হয়ে সেখান থেকে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। তাছাড়া ট্রেনে যেতে চাইলেও প্রথমে চট্টগ্রাম নেমে সেখান থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি যেতে হবে।

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি

ঢাকা থেকে সড়কপথে খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বাস রয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া নিয়মিত বাস সার্ভিস গুলো হলো- হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, ঈগল পরিবহন, সেন্টমার্টিন হুন্ডাই, গ্রীন লাইন পরিবহন। দিনের বিভিন্ন সময়ে এসকল বাস ঢাকার সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ি, কলাবাগান ও মহাখালী থেকে খাগড়াছড়ির উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়।

ঢাকা টু খাগড়াছড়ি নন এসি বাস ভাড়া ৫২০ টাকা এবং এসি সার্ভিস এর ভাড়া পড়বে ১২০০ টাকা। আপনি যদি খাগড়াছড়িতে রাত্রিযাপন করতে না চান তাহলে ঢাকা থেকে নাইট কোর্স গাড়িতে উঠবেন। তাহলে পরেরদিন খুব ভোরে খাগড়াছড়ি নেমে সারাদিন ঘোরাফেরা করে আবার রাতের গাড়িতে ঢাকা ফিরে আসতে পারবেন।

ঢাকা থেকে রেলপথে খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের যে কোনো একটি ট্রেন ধরতে হবে। দিনের বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম থেকে আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন মিলিয়ে মোট ৮ টি ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কমলাপুর থেকে ছাড়ে। আপনার সুবিধামতো যে কোনো ট্রেনে চেপে চলে যাবেন চট্টগ্রাম। সেখান থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি পৌঁছাতে হবে।

চট্টগ্রাম টু খাগড়াছড়ি

যারা বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে খাগড়াছড়ি যাবেন কিংবা ট্রেনে খাগড়াছড়ি যাবেন তাদের চট্টগ্রাম থেকে বাস ধরতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার এবং সড়কপথে যেতে সময় লাগে চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টা।

চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে এবং কদমতলী থেকে নিয়মিত বিরতি দিয়ে দিয়ে খাগড়াছড়ির উদ্যশ্যে বাস ছেড়ে যায়। যে কোনো একটি বাস ধরে আপনি খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন।

খাগড়াছড়ি থেকে ঠান্ডা ছড়া

খাগড়াছড়ি পৌঁছে সরাসরি চলে যাবেন শহরের শাপলা চত্বরে। সোখান থেকে দীঘিনালা যাওয়ার জন্য মিনিবাস, সিএনজি, কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাবেন। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৮০ টাকা। সেখান থেকে স্থানীয় বাহনে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চলে যেতে হবে ধর্মঘর এলাকায়।

ধর্মঘর থেকে পায়ে হেঁটে ঠান্ডাছড়া পৌঁছাতে হবে। ধর্মঘর পৌঁছে স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে পথ চিনে হাঁটা শুরু করতে হবে। অবশেষে দেখা মিলবে বহুল প্রতীক্ষিত সৌন্দর্যে ভরপুর ঠান্ডা ছড়ার।

ঠান্ডা ছড়ায় থাকার ব্যবস্থা

ঠান্ডা ছড়া ভ্রমণ শেষ করে আপনাকে আবার ফিরে যেতে হবে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে। কেননা এর আগে থাকার জন্য আর কোনো ভালো ব্যবস্থা পাবেন না। চাইলে ঐ দিন রাতের বাসে করে ঢাকা ফিরে আসতে পারবেন। তবে খাগড়াছড়ির অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখতে চাইলে একরাত থেকে যেতে পারেন।

এখানে থাকার জন্য পর্যটন মোটেল সহ বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল পাবেন। বেশিরভাগ ভালো মানের হোটেল পাবেন শহরের শাপলা চত্ত্বরের আশেপাশে। নিচে খাগড়াছড়ি শহরের কয়েকটি আবাসিক হোটেলের ভাড়া ও যোগাযোগের নম্বর দেয়া হলো।

১. খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল

পর্যটন মোটেলটি শহরের চেঙ্গী নদীর পাশে অবস্থিত। এখানে এসি রুমের ভাড়া পড়বে ২১০০ টাকা এবং নন এসি রুমের ভাড়া ১৩০০ টাকা।
মোবাইল: ০১৫৫৬-৫৫৪৩৭৫

২. হোটেল ইকোছড়ি ইন

এখানকার রুম ভাড়া সুযোগ সুবিধা অনুসারে ১০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
মোবাইল: ০১৮২৮-৮৭৪০১৪ বা, ০৩৭১-৬১৬২৫

৩. শৈল সুবর্ণ

রুম ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা
মোবাইল: ০৩৭১-৬১৪৩৬

৪. দীঘিনালা গেস্ট হাউজ

প্রতিটি রুমের ভাড়া পরবে ৭০০ টাকা
মোবাইল: ০১৮২৭-৪৬৮৩৭৭

৫. গিরি থোবার

খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে অবস্থিত খুবই ভালো মানের হোটেল হলো ‘গিরি থোবার’। এখানে সাধারণ মানের রুম থেকে ভিআইপি রুম হয়েছে। সিঙ্গেল রুম ভাড়া ১২০০ টাকা, ডবল রুমের ভাড়া ২০৫০ টাকা এবং ভিআইপি রুমের ভাড়া পড়বে ৩০৫০ টাকা। এখানে মোট দুইটি ভিআইপি রুম আছে।

এছাড়াও পুরো খাগড়াছড়ি শহর জুড়ে আরও অনেক সাধারণ মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।

খাওয়ার ব্যবস্থা

দীঘিনালায় সাধারণ মানের কিছু হেটেল পাবেন। ঠান্ডা ছড়া থেকে ঘুরে এসে এখানে খাওয়াদাওয়া করে পথের ক্লান্তি কাটাতে পারেন৷ তবে ভালোমানের খাবারের জন্য আপনাকে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে চলে যেতে হবে। এখানে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবারের বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে।

খাগড়াছড়ি গেলে সিস্টেম রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সুযোগ একদমই মিস করা উচিত না। এটি খাগড়াছড়ি জেলার পানখাই পাড়ায় অবস্থিত। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সকল পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন এখান থেকে। মোবাইল: ০১৭৩২-৯০৬৩২২। এছাড়াও আরও কয়েকটি সুপরিচিত ও ভালো মানের হোটেলের মধ্যে আছে চিটাগং হোটেল, এফএনএফ রেস্টুরেন্ট, নূরে মদিনা হোটেল, মনটানা হোটেল ইত্যাদি।

এই ছিলো ঠান্ডা ছড়া ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত। আশাকরি খাগড়াছড়ি ট্যুর প্লান করলে অবশ্যই দর্শনীয় স্থানের তালিকায় ঠান্ডা ছড়া বিশেষভাবে প্রাধান্য পাবে। প্রকৃতির সৌন্দর্য যে কতোটা মনোমুগ্ধকর হতে পারে তা খাগড়াছড়ি না গেলে বুঝতে পারবেন না৷ তবে ঠান্ডা ছড়া ভ্রমণের পাশাপাশি একই সাথে খাগড়াছড়ির অন্যান্য দর্শনীয় স্থান যেমন আলুটিলা পাহাড় ও গুহা, মাতাই হাকর, তুয়ারি মাইরাং, তৈদুছড়া ঝর্না থেকেও ঘুরে আসতে পারেন৷

Scroll to Top