ভারত প্রজাতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য কেরালা। রাজ্যটি ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত। কেরালা রাজ্যের উত্তর দিকে কর্নাটক, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আরব সাগর এবং উত্তর- পশ্চিম দিকে পণ্ডিচেরি রাজ্য অবস্থিত।
সবুজের মায়ায় ঘেড়া মনোরম পরিবেশের এই রাজ্যে পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চল এবং সেই সাথে সমতলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবকিছুই একসাথে ঘুরে দেখা সম্ভব।
তাছাড়াও আছে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন সমূহ ও নানান পার্ক ও রিসোর্ট। ভারত ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে অবশ্যই কেরালা রাজ্য ভ্রমন তালিকায় রাখা উচিত।
ভারতের কেরালা রাজ্যের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান সমূহ ছবিসহ
রাজধানী দিল্লি থেকে সড়পথ, রেলপথ এমনকি আকাশপথেও সরাসরি কেরালার রাজধানী তিরুবনন্তপুরম সহ সবগুলো প্রধান শহরে পৌঁছানো যায়। তিরুবন্তপুরমে নেমে সেখান থেকে রাজ্যের যে কোনো পর্যটন কেন্দ্রে যেতে পারবেন।
১. মুন্নার

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত মুন্নার পর্যটন কেন্দ্র কেরালা রাজ্যের ইদুক্কি জেলার সবথেকে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে উপভোগ করার মতো উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু হলো চা বাগান, মাট্টুপেট্টি বাঁধ, ইরাভিলুলাম জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি। তিরুবনন্তপুরম থেকে স্থানীয় পরিবহন বা ক্যাব ভাড়া করে মুন্নার পৌছানো যায়।
২. থেক্কাদি

পেরিয়ার টাইগার রিজার্ভ নামেও নামে পরিচিত থেক্কাদি পর্যটন কেন্দ্র ভারতের কেরালা রাজ্যের ইদুক্কি জেলার কেরালা-তামিলনাড়ু সীমান্তের কাছে অবস্থিত। বিশাল প্রাকৃতিক জীবের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিগনিত এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে ৬০ টিরও বেশি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৬৫ প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ, উভচর ইত্যাদি সহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এখানে ট্রেকিং, বোটিং এবং জিপ সাফারির মতো বিভিন্ন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
তিরুবনন্তপুরম থেকে বাসে, জীপে বা ব্যক্তিগত গাড়িতে থেক্কাদি পৌঁছানো যাবে। থেক্কাদি থেকে সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হলো মাদুরাই বিমানবন্দর যা থেক্কাদি থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
৩. আলেপ্পি
আলেপ্পি বা আলাপ্পুঝা হলো কেরালা রাজ্যের একটি ছোট পর্যটন শহর। হাউসবোট ক্রুজের আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি চমৎকার গ্রামের মধ্যে হাঁটার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন এখানে, তাছাড়া হাজার বছড়ের আয়ুর্বেদ থেরাপির প্রাকটিকাল প্রসেস দেখতে পারবেন। ভারতের যে কোনো রাজ্য থেকে বাস, ট্রেন বা আকাশপথে কোচি হয়ে আলেপ্পি আসা যায়।
৪. কুমারাকম

ম্যানগ্রোভ বন, ঐতিহাসিক নিদর্শন, জলপ্রপাত, পাখির অভয়ারণ্য সহ বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক বিষয়বস্তুর বিশাল সমাহার কুমারাকম পর্যটন এলাকা। আরুভিকুঝি জলপ্রপাত কুমারাকম এর সবথেকে বড় প্রাকৃতিক আকর্ষণ এবং থাজথাংগাডি মসজিদ সবথেকে জনপ্রিয় ঐতিহাসিক নিদর্শন। ভারতের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য থেকে তিরুবনন্তপুরমে পৌছে সেখান থেকে বাসে চেপে কুমারাকম পৌঁছাতে পারবেন।
৫. ত্রিশুর

কেরালা রাজ্যের ত্রিশুর জেলার একটি ছোট পর্যটন শহর ত্রিশুর। স্বর্ন ও হীরার গহনার জন্য শহরটি বিখ্যাত এবং এখানে বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত ও জলপ্রপাত রয়েছে। ত্রিশুর এর জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত গুলো হলো চাভাক্কাদ সমুদ্র সৈকত, নাটিকা সমুদ্র সৈকত, ভাদানপল্লী সমুদ্র সৈকত, স্নেহাথেরাম সমুদ্র সৈকত এবং পেরিয়াম্বলাম সমুদ্র সৈকত।
ট্রেনপথ ত্রিশুর যাওয়ার সবথেকে উপযুক্ত মাধ্যম, কেননা ত্রিশুর রেলওয়ে স্টেশন কেরালা রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। তাছাড়া সড়কপথে এবং আকাশপথেও এখানে পৌঁছানো যায়।
৬. আথিরাপলি জলপ্রপাত

ত্রিশূর জেলায় অবস্থিত কেরালার বৃহত্তম জলপ্রপাত আথিরাপলি জলপ্রপাত, যার উচ্চতা ৮০ ফুট এবং প্রশস্ত ৩৩০ ফুট। চারদিকে জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশের মধ্যে বিশাল জলরাশি এবং সেই সাথে বুনো পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত পরিবেশ সব সময় বিদ্যমান থাকে।
ত্রিশুর জেলাশহর থেকে স্থানীয় বাহনে আথিরাপলি জলপ্রপাতে যাওয়া যায়।
৭. ওয়েনাড
ওয়েনাড ভারতের কেরালা রাজ্যের উত্তরাংশে অবস্থিত একটি পর্যটন এলাকা যেখানে সু-উচ্চ হিল স্টশন থেকে শুরু করে পাহাড়ি গুহা, জলপ্রপাত ও অভয়ারণ্যের রোমাঞ্চকর পরিবেশ রয়েছে। ওয়েনাড এর সবথেকে জনপ্রিয় স্পট হলো ওয়েনাড বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য, বানাসুরা সাগর বাঁধ, এডাক্কাল গুহা ইত্যাদি।
সড়কপথে যে কোনো রাজ্য থেকে কেরালা হয়ে ওয়েনাড আসা যায়। ট্রেনে আসতে চাইলে কোঝিকোর রেলওয়ে স্টেশন নেমে বাকি পথ বাসে পাড়ি দিতে হবে।
৮. কোচি

কেরালা রাজ্যের বন্দর শহর কোচি যা প্রাচীনকাল থেকেই একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে দেখতে পাবেন ডাচ স্থাপনার সারাংশ, ব্রিটিশ ইতিহাসের বিভিন্ন নিদর্শন, চীনা জাল বা ঐতিহ্যবাহী মশলার বাজার সহ আরও আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু। অন্যান্য রাজ্য থেকে কোচি ভ্রমনের সবথেকে সহজ ও সাশ্রয়ী মাধ্যম ট্রেন। তাছাড়া সড়কপথে ও আকাশপথেও যাতায়াত করা যায়।
৯. কোভালাম
আরব সাগরের উপকূলরেখা বরাবর অবস্থিত কোভালাম পর্যটন এলাকাটি নিঃসন্দেহে ভারতের সবথেকে সুন্দর সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপহার দিতে সক্ষম। কোভালাম পর্যটন কেন্দ্রে এলে একসাথে কোভালাম বিচ, লাইটহাউস বিচ, হাওয়াহ বিচের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
কেরালার রাজধানী তিরুবনন্তপুরম থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিধায় যে কোনো জায়গা থেকে তিরুবনন্তপুরম এসে বাসে চেপে কোভালামে আসা যায়।
১০. কোল্লাম
সমুদ্র সৈকত, জলপ্রপাত, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও বিভিন্ন পার্কের সমন্বয়ে ঐশ্বর্যমণ্ডিত কেরালার একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা কেল্লাম। এখানে দেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্পট গুলোর মধ্যে থিরুমুল্লাভারম সৈকত, কোল্লাম সৈকত, পালারুভি জলপ্রপাত, ডিয়ার পার্ক, নিন্দাকারা বন্দর, থেভাল্লি প্রাসাদ ইত্যাদি উল্লখযোগ্য।
সড়কপথে বা আকাশপথে আসতে চাইলে প্রথমে তিরুবনন্তপুরম নেমে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে কোল্লাম আসতে হবে। রেলপথে আসলে সরাসরি কেল্লাম রেলওয়ে জংশনে নামতে হবে।
১১. ভাগামন
কেরালা রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলের মধ্যে সবথেকে কম পর্যটকের আনাগোনা হয় ভাগামনে, ফলে মনোরোম সুন্দর একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ভাগামনে উপভোগ্য বিষয়বস্তুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – পাইন পাহাড়, পারুমথুমপাড়া পয়েন্ট, উলিপুনি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মুরিঞ্জুপুঝা জলপ্রপাত, ইদুক্কি আর্চ ড্যাম ইত্যাদি। কোচি বা তিরুবনন্তপুরম থেকে ক্যাব ভাড়া করে ভাগামনে আসা যায়।
১২. কোঝিকোড়
মশলার শহর বা ভাস্কর্যের শহর নামে পরিচিত কেরালা রাজ্যের জনপ্রিয় পর্যটন শহর কোঝিকোড় যেখানে সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে কৃত্রিম হ্রদ, জলপ্রপাত, ঐতিহাসিক নিদর্শন এর এক বিশাল সমাহার রয়েছে। কোঝিকোড় পর্যটন এলাকার জনপ্রিয় স্পটগুলো হলো- কোঝিকোড় সৈকত, কাপ্পাড সৈকত, কোজিপ্পারা জলপ্রপাত, থুশারাগিরি জলপ্রপাত, পেরুভান্নামুঝি বাঁধ, লায়ন্স পার্ক ইত্যাদি।
রেলপথে আসতে চাইলে সরাসরি কোঝিকোড় রেলওয়ে স্টেশনে এসে নামতে পারবেন। আকাশপথে আসলে কালিকট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কোঝিকোড় থেকে ২৮ কিমি) হয়ে বাসে কোঝিকোড় পৌছাতে হবে। তাছাড়া সড়কপথেও আাসা যায়।
১৩. বেকাল
বেকাল হলো কেরালা রাজ্যের কাসারাগোদ জেলায় অবস্থিত মনোরম গ্রামীন পরিবেশ খ্যাত পর্যটন এলাকা। এখানকার জনপ্রিয় স্পটগুলো হলো- বেকাল ফোর্ট, কাপিল সৈকত, নিত্যানন্দর্শন গুহা, বেকাল হোল অ্যাকোয়া পার্ক, ভ্যালিয়াপারম্বা ব্যাকওয়াটার্স ইত্যাদি।
রেলপথে বেকাল আসতে চাইলে দুটি স্টেশনে নামতে পারেন। একটি কাসারাগোদ রেলওয়ে স্টেশন যা বেকাল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে, অথবা কানহাঙ্গাদ রেলওয়ে স্টেশন যা বেকাল থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চাইলে সরাসরি সড়কপথেও আসতে পারবেন।
১৪. ভারকালা

কেরালার ত্রিভান্দ্রমের একটি উপকূলীয় পর্যটন শহর ভারকালা, যেখানে প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন সমূহের পাশাপাশি সমুদ্র উপকূলীয় পাহাড়ের দেখা মিলবে। পর্যটন এলাকাটির মূল আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে ভারকালা সৈকত, থিরুভাম্বাদি সৈকত, অ্যাঞ্জেঙ্গো ফোর্ট, ভারকালা টানেল, ভারকালা অ্যাকোয়ারিয়াম ইত্যাদি।
ট্রেনে আসলে সরাসরি ভার্কাল শিবগিরি রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পরিকল্পনা মতো নির্দিষ্ট স্পটে পৌছে যেতে পারবেন। সড়কপথে সরাসরি বাসে ভারকালা পৌঁছানো যায়।
১৫. তিরুবনন্তপুরম
কেরালা রাজ্যের সবথেকে জনপ্রিয় পর্যটন শহর তিরুবনন্তপুরম যেখানে চিরসবুজ বণ্য এলাকা সহ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সমুদ্র সৈকতের অঢেল সৌন্দর্য রয়েছে। তিরুবনন্তপুরমের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হলো- কোইক্কল প্রাসাদ, শেন্দুর্নি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মানকায়াম জলপ্রপাত, পেপ্পারা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, গোল্ডেন ভ্যালি, মীনমুট্টি জলপ্রপাত ইত্যাদি।
যে কোনো রাজ্য থেকে আকাশপথে যাত্রা করে ত্রিবান্দ্রম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যন্ড করতে পারবেন, রেলপথে আসলে নামতে হবে ত্রিভান্দ্রম সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনে আর সড়কপথে যে কোনো সময় বাসে যাতায়াত করা যায়।
১৬. পুভার সমুদ্র সৈকত
কোভালাম থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুভার সমুদ্র সৈকত একটি প্রাকৃতিক আশ্চর্য যেখানে সমুদ্র একটি নদী ও একটি হ্রদের সাথে মিলিত হয়েছে। পুভার সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনের পাশাপাশি এখানে তিরুপারাপ্পু জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এবং জেলেদের গ্রামে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। কোভালাম থেকে খুব সহযেই স্থানীয় বাহনে চেপে পুভার সৈকতে আসা যায়।
১৭. অষ্টমুদি
কেরালা রাজ্যের কেল্লাম জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত পর্যটন এলাকা অষ্টমুদি। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার প্রধান কারণ অষ্টমুদি লেক, মনরো দ্বীপ ও থেভ্যালি প্যালেস। তিরুভন্তপুরম থেকে ক্যাব বা বাসে অষ্টমুদি আসা যায়। আর ট্রেনে আসলে কোল্লাম জংশনে নামতে হবে যা অষ্টমুদি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, বাকিটা পথ স্থানীয় বাহনে পাড়ি দিতে হবে।
১৮. গুরুভায়ুর
ঐতিহাসিক স্থাপত্যেশৈলী ও বিভিন্ন আধুনিক প্রতিষ্ঠানের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে গুরুভায়ুর পর্যটন এলাকা। এখানে পরিদর্শন করতে পারবেন গুরুভায়ুর এলিফ্যান্ট ক্যাম্প। রেলপথে আসতে চাইলে সরাসরি গুরুভায়ুর জংশনে নামতে পারবেন। তাছাড়া বাসযোগে সড়কপথে সরাসরি গুরুভায়ুর আসা যায়।
১৯. পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্ক

কেরালা রাজ্যের থেক্কাডি জেলার সবথেকে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্ক যা একটি মনোমুগ্ধকর বণ্য প্রাণীর অভয়ারণ্য। এখানে জঙ্গল, হ্রদ ও পশুপাখির সমারোহের মধ্যে জঙ্গল প্যাট্রোল, বর্ডার হাইকিং, ব্যাম্বু গ্রোভ, ব্যাম্বু রাফটিং, পেরিয়ার টাইগার ট্রেইল, জঙ্গল ক্যাম্প এবং ষাঁড়ের গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা সহ অনেক রোমাঞ্চকর বিষয়বস্তু উপভোগ করতে পারবেন। থেক্কাডি থেকে স্থানীয় বাহনে সরাসরি পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্কের সামনে আসা যায়।
২০. হিল ভিউ পার্ক
ইদুক্কি জেলার পাহাড়ি পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে অন্যতম হিল ভিউ পার্ক যা বেশ পরিকল্পিত ভাবে ডেকোরেশন করা হয়েছে। এই পার্ক থেকে বৈশালী গুহা, ইদুক্কি বাঁধ, চেরুথোনি বাঁধ এবং জলাধারের একটি অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। সড়কপথে ইদুক্কি পৌছানো সবথেকে সুবিধাজনক। বাসে চেপে ইদুক্কি নেমে স্থানীয় যানবাহনে এবং কিছুটা ট্রেকিং করে হিল ভিউ পার্ক পৌছুতে পারবেন।
২১. কান্নুর
কেরালার মুকুট নামে অভিহিত কান্নুর পর্যটন শহরটি কেরালা রাজ্যের কান্নুর জেলায় অবস্থিত যেখানে একই সাথে ঐতিহাসিক নিদর্শন সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমারোহ রয়েছে। এই শহরের উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পটগুলো হলো- মুজাপ্পিলাংগাদ ড্রাইভ-ইন সৈকত, পয়্যাম্বলাম সৈকত, মীনকুন্নু সৈকত, থোটাদা সৈকত, আরক্কাল মিউজিয়াম, ফোর্ট সেন্ট অ্যাঞ্জেলো, হলি ট্রিনিটি ক্যাথেড্রাল ইত্যাদি।
সরাসরি রেলপথে এই শহরে এসে কান্নুর রেলওয়ে স্টেশন নামতে পারবেন। সরকপথে কান্নুরগামী বাসে চেপে সরাসরি শহরে প্রবেশ করতে পারবেন।
২২. কাসারাগোদ
কেরালা রাজ্যের কাসারগড় জেলার ঐতিহাসিক শহর কাসারাগোদ যেখানে কাছাকাছি বেশ কয়েকটি অভয়ারণ্য, প্রাচীন নিদর্শন ও রিসোর্ট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য উপভোগ্য বিষয়বস্তু হলো- পারাপ্পা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মালোম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মালিক দীনার মসজিদ, রক পয়েন্ট, মাইপদী প্রাসাদ, চন্দ্রগিরি ফোর্ট ইত্যাদি।
রেলপথে গেলে সরাসরি কাসারগোদ জংশনে নামতে পারবেন এছাড়া সরাসরি সড়কপথেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো।
২৩. কাভায়ি ব্যাকওয়াটারস
কেরালা রাজ্যের সবথেকে সুন্দর ও পরাবাস্তব ব্যাকওয়াটারস হলো কান্নুর জেলায় অবস্থিত কাভায়ি ব্যাকওয়াটার। এখানে বোটিং এর অভিজ্ঞতার সাথে ঘুরে দেখতে পারবেন কাভয়ি দ্বীপ, পায়ান্নুর দ্বীপ, ভ্যালিয়াপারম্বা দ্বীপ। রেলপথে আসলে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাইয়ান্নুর জংশনে নেমে পড়তে হবে তাছাড়া সরাসরি সড়কপথেও আসতে পারবেন। সারাদিনের জন্য বোট ভাড়া করে প্রতিটি দ্বীপে ঘুরে রেড়ানো যাবে।
২৪. কিঝুন্না সমুদ্র সৈকত
কেরালা রাজ্যের কান্নুরে অবস্থিত সবথেকে আকর্ষণীয় বীচ কিঝুন্না সমুদ্র সৈকত যা কিঝুন্না এজাহারা সৈকত নামেও পরিচিত। কিঝুন্না সমুদ্র সৈকত এসে বীচে হাটা, সুইমিং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ এবং আঞ্চলিক গ্রামগুলি ভ্রমনের মতো বেশ রোমাঞ্চকর অনুভূতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। রেলপথে আসলে ১০ কিমি দূরে কান্নুর রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পরতে হবে আর সরাসরি আসতে চাইলে বাসে চেপে সড়কপথে আসতে হবে।
২৫. কুত্তানাদ
কুত্তানাদ হলো আলাপ্পুঝা, কোট্টায়াম এবং পাথানামথিত্তা জেলা নিয়ে গঠিত একটি প্রাকৃতিক নৈসর্গিক রূপে আচ্ছাদিত পর্যটন এলাকা। পুন্নমাদা হ্রদ, মণিমালা নদী, মীনাচিল নদী, আচানকোভিল নদী, ব্যাকওয়াটার, ঐতিহ্যবাহী জলের টারবাইন সহ সুবিশাল ধান ক্ষেতের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এখানে। রাজ্যের যে কোনো অঞ্চল থেকে বাসযোগে কুত্তানাদ পৌছুতে পারবেন।
২৬. মালাম্পুঝা
কেরালা রাজ্যের সবুজে আচ্ছাদিত জল, পাহাড়, কৃত্রিম রিসোর্ট আর প্রাচীন নিদর্শন সমৃদ্ধ পর্যন্ত এলাকা মালাম্পুঝা। মালাম্পুঝা পর্যটন এলাকার জনপ্রিয় স্পটগুলো হলো- মালাম্পুঝা গার্ডেন, মালাম্পুঝা ড্যাম, ধোনি পাহাড়, ধোনি জলপ্রপাত, পালাক্কাদ ফোর্ট, থ্রেড গার্ডেন, স্নেক পার্ক, ফ্যান্টাসি পার্ক ইত্যাদি। বাসে চেপে মালাম্পুঝা সদরে পৌঁছে সেখান থেকে স্থানীয় বাহনের সাহায্যে সবগুলো স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন।
২৭. মালাপ্পুরম
কেরালা রাজ্যের দক্ষিণ কোনায় অবস্থিত মালাপ্পুরম শহরটি তার বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন এর জন্য বিখ্যাত। এখানে উপভোগ করার মতো উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পট হলো- কেরালামকুন্ডু জলপ্রপাত, কদালুন্ডি পাখির অভয়ারণ্য, পাদিনহারেকরা সৈকত, আপ অ্যান্ড ডাউন হিল, আরিম্ব্রা পাহাড়, সেগুন জাদুঘর, থিম্পপুর মসজিদ ইত্যাদি। রাজধানী শহর থেকে বাসে করে অথবা ক্যাব ভাড়া করে মালাপ্পুরম আসা যায়।
২৮. মারারি সমুদ্র সৈকত
কেরালার আলেপ্পি জেলায় অবস্থিত ভার্জিন সি বীচ মারারি সমুদ্র সৈকত। এখানে ডাইভিং, সুইমিং ও ফিসিং অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নিকটস্থ ডাচ প্যালেস, চাইনিজ ফিশিং নেটস, আলাপ্পুঝা বিচ বীচ সহ আরও কয়েকটি জনপ্রিয় স্পট ঘুরে দেখার সুযোগ পাবোন। আলেপ্পি শহর থেকে স্থানীয় বাহনে সরাসরি মারারি সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাতে পারবেন।
২৯. মুনরো দ্বীপ
অষ্টমুডি হ্রদ এবং কল্লদা নদীর সঙ্গম স্থলে অবস্থিত মূল চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে মুনরো দ্বীপ গড়ে উঠেছে কোল্লাম থেকে প্রায় ২৭ কিমি দূরে অবস্থিত নারকেল বাগানে ঘেরা এই দ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট হলো- ওয়ান্ডারলা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, কেরালা কথাকলি সেন্টার, জিউ টাউন, মাত্তানচেরি প্যালেস, সান্তা ক্রুজ ব্যাসিলিকা, অষ্টমুদি লেক ইত্যাদি। কেল্লামের মূল ভূখন্ড থেকে বোট ভাড়া করে পুরো দ্বীপের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো এবং দ্বীপে ল্যান্ড করার সুযোগ রয়েছে।
৩০. পালাক্কাদ
কেরালার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় শহর পালাক্কাদ যেখানে সুউচ্চ পর্বতমালার শৃঙ্গ থেকে শুরু করে, প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও বিভিন্ন রিসোর্ট রয়েছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পট হলো- সাইলেন্ট ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক, পালাক্কাদ ফোর্ট, কাভা ভিউ পয়েন্ট, মায়িলাদুমপাড়া ময়ূর অভয়ারণ্য, রক গার্ডেন ইত্যাদি। রেলপথে পালাক্কাদ যাওয়া সবথেকে সুবিধাজনক। পালাক্কাদ জংশন বা পালাক্কাদ টাউন রেলওয়ে স্টেশন নেমে সখান তেকে যে কোনো স্পটে খুব সহযেই পৌছুতে পারবেন।
৩১. নেলিয়ামপ্যাথি
কেরালার পালাক্কাদ জেলার একটি পাহাড়ে ঘেরা গ্রাম নেলিয়ামপ্যাথি যা হিল স্টেশনের জন্য জনপ্রিয়। পর্যটন এলাকাটিতে উপভোগ্য বিষয়বস্তুর মধ্যে নেলিয়ামপ্যাথি পাহাড়, পারম্বিকুলম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, পালাগাপান্ডি এস্টেট, সীতারকুন্ডু ভিউপয়েন্ট, পোথুন্ডি জলাধার, নেলিয়ামপ্যাথি বাগান উল্লেখযোগ্য। সড়কপথে সরাসরি নেলিয়ামপ্যাথি যাওয়া যায় এবং রেলপথে যেতে চাইলে পালাক্কাদ রেলওয়ে স্টেশনে নেমে বাকি পথ স্থানীয় বাহনে যেতে হবে।
৩২. মেরিন ড্রাইভ
কেরালা রাজ্যের কোচি শহরের এমজি রোডে অবস্থিত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মেরিন ড্রাইভ। রেইনবো ব্রিজের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের পাশাপাশি সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করার উপযুক্ত জায়গা এটি। এছাড়াও কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া ও সুন্দর একটি সন্ধ্যা উপভোগ করতে পর্যটকরা এখানে ভীড় জমায়। কোচি শহর থেকে স্থানীয় বাহনে সরাসরি মেরিন ড্রাইভে যেতে পারবেন।
ভারতের অন্যতম পর্যটন রাজ্য কেরালা যার প্রতিটি শহরেই মনোমুগ্ধকর অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। বলা যায় কেরালার প্রতিটি শহরই এক একটি পর্যটন এলাকা এবং প্রত্যেকটিরই সমান গুরুত্ব রয়েছে। তাই ভারত ভ্রমণে কেরালা রাজ্যেকে তালিকায় রাখা উচিত।