সাগর কন্যা কুয়াকাটা ভ্রমন গাইড। কিভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন?

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। সমুদ্র পাহাড় সবুজ বনভূমি নিয়ে বাংলাদেশের সৌন্দর্যের শেষ নেই। এই সৌন্দর্য নিয়ে লেখা হয়েছে কতো গান কতো কবিতা। ভ্রমণ পিপাসু মানুষ সবসময় চায় তার সময় কাটুক প্রকৃতির সাথে। আপনি যদি তেমনই একজন হন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

 
সৌন্দর্য অন্বেষণের একটি মাধ্যম হতে পারে সমুদ্র। সাগর ভালো লাগে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে৷ তাই সাগর পারের বিচিত্র সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য চলে যেতে পারেন কুয়াকাটা (Kuakata) সমুদ্র সৈকতে। “সাগর কন্যা” হিসেবে পরিচিত ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটি বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী আসে কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

 
তবে কুয়াকাটা কিভাবে যাবেন, কুয়াকাটায় গিয়ে কোথায় থাকবেন সেসব জেনে না নিলে ভ্রমনের শুরুতেই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। তাই, আপনার ভ্রমণকে মসৃণ করতে আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে কুয়াকাটা কিভাবে যাব, কুয়াকাটায় থাকার হোটেল ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় আরো অনেক তথ্য।

কুয়াকাটার ইতিহাস

কুয়াকাটা নামের পিছনে রয়েছে আরাকানীদের এদেশে আসার ইতিহাস। বলা হয়ে থাকে ১৮ শতকে মুঘল শাসকদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে আরাকানীরা এখানে এসে বসবাস শুরু করে। কুয়া শব্দটি এসেছে কূপ থেকে।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দক্ষিন এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।
সমুদ্রের বুক চিড়ে সূর্য ওঠা আবার দিন ফুরালে সমুদ্রের বক্ষের সূর্যের হারিয়ে যাওয়া দেখাত দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ। সবচেয়ে ভালোভাবে সূর্যাদোয় দেখা যায় সৈকতের গঙ্গামতির বাক থেকে আর সূর্যাস্ত দেখা যায় পশ্চিম সৈকত থেকে।

কিভাবে যাবেন কুয়াকাটা?

বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালি ইউনিয়নে অবস্থিত। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা দূরত্ব ৩০৮ কিলোমিটার, আর বরিশাল থেকে ১০৮ কিলোমিটার। কুয়াকাটা সদর উপজেলা থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। কুয়াকাটা সড়ক পথে এবং নদী পথে যাওয়া যায়।

সড়ক পথে কুয়াকাটা যাওয়ার উপায়:

পদ্ম সেতু ও লেবুখালী ব্রিজ হওয়ার পরে কুয়াকাটার সাথে যোগাযোগ ব্যাবস্থা আরো সহজ হয়েছে। এখন কোন ফেরি পার হতে হয় না। ঢাকা থেকে অনেক বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। বেসরকারি পরিবহনের পাশাপাশি বিআরটিসি পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকাটায় যায়। আপনি এসব বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ১৫০-২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দিবে। ঢাকা গাবতলী থেকে প্রতিদিন অসংখ্য বাস কুয়াকাটা উদ্দেশ্যে আসে। সকাল সন্ধ্যা যেকোনো সময় কুয়াকাটার বাস পাবেন। ঢাকা থেকে বাসে কুয়াকাটা যেতে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা সময় লাগে।
ঢাকা টু কুয়াকাটা বাস ভাড়া: সুরভীতে শুধুমাত্র ৭৫০ বাকিগুলোতে ৬৫০। বাস কোম্পানি ও সময় ভেদে ভাড়া বেশি-কম হতে পারে।
ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে সরাসরি বাস এখন কুয়াকাটা আসে।

রেলপথে কুয়াকাটা যাওয়ার উপায়:

ঢাকা থেকে সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য কোন ট্রেন নেই। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস বা চিত্রা এক্সপ্রেসে খুলনা যেতে হবে।
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ থকুয়াকাটা যেতে সৈয়দপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে প্রথমে খুলনা আসতে হয়।
এরপর খুলনা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টায় একটি বিআরটিসি বাস ছেড়ে যায়। খুলনা থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় ৭/৮ ঘণ্টার মতো। বাসভাড়া ২৭০-৩০০ টাকা।

নদী পথে কুয়াকাটা যাওয়ার উপায়:

যারা বাসে চড়তে পারেন না। তাদের কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য লঞ্চ হতে পারে সুন্দর একটি বিকল্প ব্যবস্থা। ঢাকা থেকে বরিশাল লঞ্চ জার্নি আপনার ভ্রমনের অভিজ্ঞতায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এছাড়া আমতলী বা পটুয়াখালি হয়েও লঞ্চে কুয়াকাটা যাওয়া যায়।

hotel booking

আমতলী টু কুয়াকাটা

প্রতিদিন ঢাকা সদরঘাট হতে আমতলীর লঞ্চ ছাড়ে। লঞ্চ ছাড়ার সময় ৪.৩০ হতে ৫.০০ টা। লঞ্চ ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা করে (ডেক), আর কেবিনে গেলে ১০০০ টাকা সিঙ্গেল, ২০০০ টাকা ডাবল।
বরিশাল থেকে যেই বাসগুলো কুয়াকাটা যায় সেগুলোতেই আমতলী থেকে উঠতে পারবেন কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য। ভাড়া ১০০ টাকার মতো। এখানে অনেক বাস এবং খাওয়ার হোটেলও পাবেন।

বরিশাল টু কুয়াকাটা

ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশাল রুটের লঞ্চগুলা সাধারণত সন্ধ্যা ৮-৯ টার দিকে ছাড়ে। ভোড় ৪ টার দিকে লঞ্চ বরিশালে পৌঁছায়। বরিশাল লঞ্চঘাটে অনেক থাকা ও খাওয়ার হোটেল আছে সেখানে নাস্তা করে আপনি চলে যেতে পারেন কুয়াকাটা।
লঞ্চধাট থেকে রিকশা অথবা অটোতে নথুল্লাবাদ কিংবা রুপাতলী বাসে কুয়াকাটা যেতে পারেন।

বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যাওয়া যায় ২ টি উপায়ে:

১. নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী দিয়ে সব সময়ই কুয়াকাটার বাস পাওয়া যায়। ১ ঘন্টা অন্তর অন্তর কুয়াকাটার বাস ছাড়ে। বাস ভাড়া ৩০০-৩০০ টাকা। কুয়াকাটা যেতে কোন ফেরি পার হতে হয় না, তাই ২.৩০-৩ ঘন্টার মধ্যেই কুয়াকাটা যাওয়া যায়। বরিশাল থেকে যাওয়ার সময় আপনি লেবুখালি ব্রিজ আর শেখ হাসিনা সেনা নিবাস দেখতে পারেন। এছাড়া, যাওয়ার পথে পায়রা পোর্ট পরবে। রাস্তার ধারের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে আপনি কুয়াকাটা পৌছে যাবেন।

২. বরিশাল থেকে সরাসরি মাইক্রোবাসে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া একটু বেশি পরবে। ২.৩০ ঘন্টার মধ্যেই কুয়াকাটা পৌছানো যাবে। দামাদামি করলে ৩৫০০ টাকায় রাজি হবে।

পটুয়াখালী টু কুয়াকাটা

ঢাকা সদরঘাট থেকে বিকাল ৫.৩০ থেকে ৬.৩০ টার মধ্যে বিভিন্ন লঞ্চ পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ঢাকা-পটুয়াখালী রুটের লঞ্চগুলো ছাড়ে সদরঘাটের একদম পশ্চিম দিক থেকে। প্রতিদিন ৩টি লঞ্চ পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং এই রুটের লঞ্চগুলো বেশ নতুন আর মজবুত। লঞ্চগুলো পটুয়াখালী পৌছায় সকাল ৭ টার দিকে। লঞ্চ ভাড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে (ডেক), আর কেবিনে গেলে ১০০০ টাকা (সিঙ্গেল), ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা (ডাবল)। অতিরিক্ত যাত্রী নিলে এক্সট্রা চার্জ দিতে হবে। ২৫০০ – ৩০০০ টাকা ফ্যামিলি কেবিনের ভাড়া। ভিআইপি কেবিনে লঞ্চভেদে ৩০০০-৪০০০ টাকার মধ্যে হয় থাকে।

লঞ্চ থেকে সকালে পটুয়াখালী নেমে একটা রিক্সা নিয়ে (ভাড়া ১৫/২০ টাকা) বাস স্ট্যান্ডে চলে যেতে হবে। এখান থেকে (চৌরাস্তা) মোটর সাইকেল পাওয়া যায়। এক মোটর সাইকেলে ২ জন জাত্রী বসা যাবে, সরাসরি কুয়াকাটা পর্যন্ত ভাড়া নিবে ৬০০-৮০০ টাকা (দরদাম করতে হবে), তবে মোটর সাইকেলে না যাওয়াই ভালো। সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো। এছাড়া বাসে করেও কুয়াকাটা যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে বাস স্ট্যান্ড থেকে কুয়াকাটার বাসের টিকিট কাটতে হবে, ভাড়া নিবে ১৮০-১৯০ টাকা। পটুয়াখালী থেকে কলাপাড়া পর্যন্ত রাস্তা ভালো, রীতিমতন বিমান নামতে পারার মতো। আগে তিনটা ফেরি পার হওয়া লাগতো কিন্তু এখন ৩টা নতুন ব্রিজ হওয়াতে পুরো ঝকঝকে রাস্তা। মনে রাখবেন ৪ঃ৩০ টার পর আর কোনো বাস পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা যায় না।

কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান সমূহ

কুয়াকাটা বেরী বাঁধ দিয়ে সমুদ্র সৈকতের দিকে যেতে যেতে বাম দিকে ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে মিউজিয়াম। এরপরই কিছু দূরেই দক্ষিণে “ফার্মস এন্ড ফার্মস” এর নারিকেল বাগানসহ ফল ও ফুলের বাগান রয়েছে। এই ফার্মে রয়েছে কয়েকটি পিকনিক স্পটও। এরপরই রয়েছে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের কাক্ষিত সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের দক্ষিনে আগালেই দেখা যাবে নারিকেল বাগান এবং বন বিভাগের উদ্যোগে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ঝাউ গাছ। নারিকেল বাগান আর ঝাউ বনে রয়েছে পিকনিক স্পট, সেখানে পর্যটকরা বনভোজনের আনন্দ উদযাপন করতে পারে।

 
কুয়াকাটাতে সূর্যাদয় দেখতে চাইলে ঝাউবনে গেলেই ভালো হয়। খুব সকালে হেঁটে হেঁটে সমুদ্রের বুক চিড়ে সূর্য উঠার সৌন্দর্য দেখার আনন্দটাই আলাদা। আপনি যাওয়ার আগে দেখবেন দেখানে আপনার আগে আরও অনেক মানুষ পৌঁছে গেছে দে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পায়ে হেটে যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট আর ভ্যানে অথবা বাইকে যেতে ১০ মিনিট।
একটু সামনে গেলেই ৩ নদীর মোহনা। ৩ টি নদী কিভাবে সাগরে এসে মিশে গেছে সেই সৌন্দর্যটা দেখার মতো।


সেখান থেকে আপনাকে ফিরতে হবে কিছুটা তাড়াতাড়ি, জোয়ারের পানি আসার আগে। জোয়ারের পানি উঠে গেলে হেটে আসা অসম্ভব গাড়ি চালানোটাও রিস্ক হুয়ে যায়। তাই খুব সকালে উঠে আবার তাড়াতাড়ি ফিরে এখানে অন্যান্য জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করাই ভালো।
দিনের বেলা সাগরের গর্জন আশে-পাশের শব্দের কারণে শোনা না গেলেও রাতের বেলা সাগরের গর্জন ভয়ংকর সুন্দর রূপ নেয়। সাগরের পাশের কোন হোটেলে থাকলে হোটেল থেকেও সাগরের গর্জন শুনতে পাওয়া যাবে।



এছাড়াও সমুদ্র উপকূলে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য রয়েছে সমুদ্র ভ্রমণকারী জাহাজ, ট্রলার এবং স্পিড বোট। এসব জাহাজ ও ট্রলারে করে পর্যটকরা সুন্দরবনের অংশ ফাতরার চর, সোনার চর, কটকা, হাঁসার চর, গঙ্গামতির লেক ঘুরতে পারেন। গভীর সমুদ্রে বিচরণ করে অফুরস্ত আত্মতৃপ্তিতে নিজেদের ভরে তুলতে পারেন। সমুদ্র ভ্রমণকারী এসব জাহাজে থাকা ও খাওয়ার সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
সমুদ্রের পারে রয়েছে মাছের দোকান। সন্ধ্যার পরে এই দোকানগুলো বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। সামুদ্রিক মাছের স্বাদ পেতে চলে যেতে পারেন এই দোকানগুলোতে। ফ্রেশ মাছ নিয়ে দোকানিরা বসে থাকে। দেখে দামাদামি করার পরে আপনি যেভাবে খেতে পছন্দ করেন তারা সেভাবেই বানিয়ে দেবে। এখানের মাছের টেস্ট সত্যিই প্রশংসনীয়।

 
এছাড়া বীচের পারের অন্যান্য জিনিসের দোকান আছে যাতে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারেন। বীচ থেকে একটু দূরে রয়েছে রাখাইন মার্কেট। স্থানীয় রাখাইনরা এই মার্কেট পরিচালনা করে থাকে। এখানে রাখাইনদের হাতে বোনা বিছানার চাঁদর, জামা, শাল ইত্যাদি পাবেন। আচার চকলেটের দোকান তো আছেই। শামুক ঝিনুকের নানা রকম জিনিসপত্র।

একনজরে দেখি আসি কুয়াকাটার আরো কিছু দর্শনীয় স্থানসমূহঃ

  1. ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী নৌকা
  2. কুয়াকাটার কুয়া
  3. কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান
  4. লেবুর চর
  5. চর গঙ্গামতী
  6. ঝাউ বন
  7. লাল কাঁকড়ার চর
  8. রূপালী দ্বীপ
  9. মিষ্টি পানির কূপ
  10. রাখাইন পল্লী
  11. শুঁটকি পল্লী
  12. ঝিনুক বীচ
  13. তিন নদীর মোহনা
  14. সুন্দরবনের পূর্বাংশ (ফাতরার বন)
  15. স্বপ্ন রাজ্য
  16. পাখি মারা পানি যাদু

রাখাইন পল্লী:

কলাপাড়া উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতকে আরো মনোরম করতে পর্যাটকদের জন্য রয়েছে বাড়তি আকর্ষন আদিবাসী রাখাইনদের স্থাপথ্য নিদর্শন। এখানের রাখাইন সম্প্রদায়দের রয়েছে প্রায় দুইশত বছরের পুরানো ঐতিহ্য,“গৌতম বুদ্ধের” বিশাল আকৃতির মূর্তি। দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দিরটি কুয়াকাটা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রাখাইন পল্লীতে অবস্থিত। গৌতম বুদ্ধের এই ধ্যানমগ্ন মূর্তিটি ৩৬ ফুট উঁচু এবং ওজন প্রায় সাড়ে ৩৭ মন। কুয়াকাটা থেকে রাখাইন পল্লিতে যাওয়ার জন্য মটর সাইকেলই প্রধান বাহন। জানা গেছে যে, মন্দিরের নির্মান সৌন্দর্যে চিনের স্থাপত্য অনুসরন করা হয়েছে বা দেখে মনে হবে থাইল্যন্ড বা মিয়ানমারের কোন মন্দির দেখছ আপনি। মন্দিরের ভিতরের রয়েছে ভাবগম্ভীর পরিবেশ।

চরগংগামতী:

কুয়াকাটার মূল ভূমি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে আরেকটি আর্কষনীয় স্থান চরগংগামতী। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্য উদয় এবং সূর্যাস্তের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানকার এক তীরের স্বচ্ছ জলরাশি আপনাকে মুগ্ধ করবেই, অন্য তীরের বালিরাড়ি সবুজ বণাঞ্চল। এখানে গেওয়া, কেওড়া, ছৈলা, খৈয়া ছাড়াও নানা রকমের গাছগাছালি, আছে বন মোরগ, বানর, পাখ পাখালির কিচিরমিচির শব্দ।

ফাতরার বন:

সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম তীর থেকে শুরু হয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, যা দ্বিতীয় সুন্দরবন নামে পরিচিত। এখানে ফাতরা, গেওয়া, কেওড়া, গরাইন, বান, সুন্দরী ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ পরজাতির গাছপাছালি। সমুদ্র সৈকত থেকে বোট ভাড়া করে ১ ঘন্টায় পৌছে যাবেন ফাতরার বনে।

শুটকী পল্লী:

কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট দিয়ে সোজা পশ্চিমে গেলেই দেখা মিলবে জেলেরা সারি সারি শুটকির মাচা, যতোই সামনে এগোবেন শুটকির ঘ্রাণ তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকবে। বছরের ৪-৫ মাসে এখানে জেলেরা শুটকি বানায়। জেলেদের কথা মতে, তারা প্রায় ৫০ প্রজাতির শুটকি তৈরি করে এখানে। তবে লইট্যা আর চিংড়ির শুটকির চাহিদাই বেশি। এখানকার শুটকি দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। এখানে বছরের নির্দিষ্ট সময় শুটকি বানানো হলেও শুটকির দোকানগুলো সারা বছরই থাকে।

লাল কাঁকড়ার চর:

শুটকি পল্লী থেকে কিছু দূর সামনে গেলেই দেখা মিলবে লাল কাকড়ার৷ শত শত লাল কাকড়া দল বেধে সাগর পারে দৌড়াচ্ছে। তবে কোন কিছুর শব্দ পেলেই তারা গর্তে লুকায়।

শতবর্ষজীবী নৌকা

জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে গেলেই দেখা যাবে শতবর্ষজীবী একটি বড় নৌকা বা বজরা। ধারণা করা হয় কোন বাণিজ্যিক দল না বাণিজ্য করতে এসে এখানে এটা ফেলে যায়।

এছাড়া বেরী বাধ দিয়ে ডান দিকে গেলে গাতের ডান পাশে পড়বে কয়েকটি পার্ক। সেখানে টিকেট কেটে নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।

কুয়াকাটা ভ্রমনে কোথায় থাকবেন?

কুয়াকাটা ভ্রমণে থাকার জায়গা নিয়ে কোন সমস্যা নেই বললেই চলে। এখানে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল রয়েছে। আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনি যেকোন মানের হোটেলে থাকতে পারেন। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা দামের হোটেলও এখানে রয়েছে। হোটেল ভাড়া নির্ভর করে পর্যটক সংখ্যা ও সিজনের উপর। ছুটির দিনগুলোতে একটু ভীড় হয় বলে হোটেলের ভাড়া অনেকাংশে বেড়ে যায়। এছাড়া ১০০০-১২০০ টাকায় ভালোমানের হোটেল পাওয়া যায় এখানে। আগে থেকে বুকিং করে না রাখলেও কুয়াকাটায় অনেক হোটেল থাকাতে থাকার জায়গা পেতে তেমন সমস্যা হয় না।
সাগর পার দিয়ে কাছের হোটেল গুলোতে থাকলে ভালো হয়, এতে যাতায়াতে সুবিধা হয়। 

আধুনিক মানসম্মত হোটেল গুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • হোটেল নীলাঞ্জনা
  • হোটেল গোল্ডেন প্যারেজ
  • হোটেল বীচ ভ্যালি
  • কুয়াকাটা গেস্ট হাউস
  • হোটেল গ্রান্ড ইন
  • হোটেল সী প্যালেস
  • হোটেল সাগর কন্যা
  • হোটেল সাগর
  • হোটেল ওসান ভিউ সহ আরো বেশ কিছু হোটেল ও মোটেল।

কুয়াকাটায় থাকার খরচ সম্পর্কে আইডিয়া দিতে এবং অগ্রিম বুকিং এর জন্য কয়েকটি হোটেল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করছি:

Image: Hotel Sea Queen Inn
১. হোটেল সী কুইন
ফোন: ০১৭৯২৭৬৯১৭৯
ডাবল বেড ২০০০ টাকা
সিংগেল বেড ১০০০ টাকা

২. হোটেল সী ভিউ
ফোন: ০১৭১৬০৪০৩৯১
ডাবল বেড:২৫০০ টাকা
কাপল বেড: ১৫০০ টাকা
সিংগেল বেড: ৮০০-১০০০ টাকা।

৩. হোটেল খান প্যালেস
ফোন: ০১৭০৭০৮০৮৪৬
ফ্যামিলি রুম(VIP): ১০,০০০ টাকা
ডাবল রুম: ৬০০০ টাকা
ফ্যামিলি রুম(Deluxe): ৬,৫০০ টাকা
কাপল রুম (Deluxe): ৫,০৬০ টাকা

৪. কুয়াকাটা হোটেল & রিসোর্ট
ফোন: ০১৯৯৯৮০১৭১১
ডাবল বেড: ২৫০০ টাকা
সিংগেল বেড: ১৫০০ টাকা

এছাড়াও কুয়াকাটা গিয়ে নিজের পছন্দ মতো হোটেল দেখে ভাড়া নিতে পারবেন।

কুয়াকাটায় গিয়ে কোথায় খাবেন?

ঘরোয়া পরিবেশে খেতে চাইলে হোটেল সেফার্ড, খাবার ঘর, হোটেল যমুনা এসব হোটেল আবাসিক হোটেলে খাবার সরবারহ করে থাকে। তাছাড়া, লোকাল অনেক খাবার হোটেল আছ সেখানেও খেতে পারেন যেমন: কলাপাড়া হোটেল, হোটেল মান্নন, হোটেল বরিশাল ইত্যাদি। এসব হোটেলে কম দামে মানস্মত খাবার পাওয়া যায়। কুয়াকাটায় খাবার হোটেল গুলো সবসময় খোলা থাকে তাই খাবার নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।

যেকোনো জায়গায় ভ্রমনের সময় সকলের উচিত সসর্বোচ্চ সর্তক থাকা। পাহাড় হোক কিংবা সমুদ্র নিরাপদ ভ্রমণ আমাদের সকলের কাম্য। তাই ভ্রমণের সময় ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ মেনে চলা উচিত। কুয়াকাটায় গিয়ে যেকোন প্রকার সমস্যায় সহযোগিতা পেতে নিকটস্থ আইনের লোকের সাথে যোগাযোগ করুন।

 
ট্যুরিষ্ট পুলিশ কুয়াকাটা: ০১৭৬৯৬৯০৭১৯।
জেলা প্রশাসক কলাপাড়া উপজেলা: ০১৭৩৩৩৩৪১৫৫।


আশা করি, এখন কুয়াকাটা কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান সমূহের পাশাপাশি আপনি কুয়াকাটা ভ্রমনের একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন পেয়ে গেছেন। আপনার কুয়াকাটা ভ্রমণ আনন্দদায়ক হোক, সেই কামনা রইলো। 

Scroll to Top