কাতারের ইতিহাস, ভাষা, ধর্ম ও আয়তন এবং দর্শনীয় স্থানের তালিকা

এশিয়া মহাদেশের একটি সমৃদ্ধশীল দেশ কাতার। কাতার মূলত পারস্য উপসাগরের একটি দেশ যেখানে ইসলামিক কালচারের ওপর ভিত্তি করে দেশ পরিচালনা করা হয়। মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় কাতারের সমাজব্যবস্থায় কিছুটা আরবীয় ধাচ পরিলক্ষিত হয়। পুরো দেশটিতে কোনো জলাভূমির উপস্থিতি নেই এবং বণ্য পরিবেশও খুবই কম। রাজধানীর শহর এবং এর আশেপাশেই মূলত জনবসতি সব থেকে বেশি।

কাতারের রাজধানীর নাম দোহা এবং এটিই দেশটির বৃহত্তম নগরী বা বাসতি। দেশটির সরকারি ভাবে স্বীকৃত ভাষা আরবি। কাতারের মোট মোট আয়তন ১১,৫৮১ বর্গ কিলোমিটার বা ৪,৪৭১ বর্গ মাইল৷ আয়তনের দিক থেকে কাতার বিশ্বের ১৬৪ তম বৃহত্তম দেশ।

২০১৬ সালের আনুমানিক হিসেব মতে কাতারের মোট জনসংখ্যা ২,৬৭৫,৫২২। জনসংখ্যার দিক থেকে দেশটি বিশ্বের ১৪২ তম বৃহত্তম দেশ। দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ, কেননা এখানে প্রচুর পরিমানে খনিজ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। খনিজ সম্পদগুলোর সন্ধান মেলার পর থেকে কাতারের অর্থনৈতিক অবস্থান দিন দিন উন্নত থেকে উন্নততর হয়ে চলেছে।

কাতারের ভৌগোলিক অবস্থান

কাতার মূলত পূর্ব আরবের একটি উপদ্বীপ। দেশটির ভৌগোলিক সীমানা আরব উপদ্বীপ থেকে শুরু করে উত্তরে পারস্য উপসাগরের ভিতর দিকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার বা ৯৯ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির ভূমির বৈশিষ্ট্য সাধারণত সমতল, খুব উঁচু ভূমি বা পর্বত নেই বললেই চলে।

কাতারের ভূ ভাগের সর্বোচ্চ বিন্দু ১০৩ মিটার বা ৩৩৮ ফুট। ভৌগোলিক দিক থেকে বিবেচনা করলে দেশটিকে অনেক বৈচিত্র্যময় বলে মনে হয়। কোথাও দেখতে পাওয়া যায় উপকূলীয় নোনা পানি শুকিয়ে সৃষ্ট গর্ত আবার কোথাও উঁচু চুনাপাথরের গঠন আবার এরই নিচে আছে সুবিশাল তেলক্ষেত্র।

কাতার উপদ্বীপের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বালিয়াড়ি এবং লবণাক্ত ভূমির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।আবার অন্যদিকে পশ্চিম কাতারের দুখান অঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায় এবং উত্তর-পূর্ব দিকের বেশিরভাগই পার্বত্য এলাকা। কাতারের সাথে শুধুমাত্র একটি দেশের স্থল সীমান্ত রয়েছে এবং দেশটি হলো সৌদি আরব। দেশটির মোট ভূখণ্ডের মাত্র শতকরা ৫.৬ ভাগ জমি আবাদযোগ্য।

কাতারের ইতিহাস

উট সাথে আরবের একজন

কাতারের ইতিহাস উপসাগরীয় অঞ্চল এবং আরব উপদ্বীপের ইতিহাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। কাতার কয়েক শতাব্দী ধরে পারস্যের আধিপত্যে শাসিত হয়েছে এবং এর পরে দেশটি অটোমানদের অধীনে চলে যায়।তবে অটোমানরা কাতার দখল করার আগে অল্প কিছু সময়ের জন্য পর্তুগীজরা এই ভূখন্ড শাসনের সুযোগ পেয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু পর্যন্ত অটোমানরা বেশ কয়েকবার কাতারের অধিপত্য দখল করে নেয়।

অটোমান সম্রাজ্যের পতন ঘটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং ১৯১৬ সালে কাতার আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কাতার সহ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোর উপর থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রভাবের ক্ষেত্র হ্রাস পেতে শুরু করে। ১৯৬৮ সালে ব্রিটিশরা ঘোষণা করে যে তারা পারস্য উপসাগর থেকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

এরই ফলস্বরূপ কাতার, বাহরাইন এবং অন্যান্য সাতটি দেশ মিলে একটি ফেডারেশন তৈরি করেছিল। কিন্তু আঞ্চলিক বিরোধের কারনে কাতার ১৯৭১ সালে সংযুক্ত এই জোট থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এবং ১৯৭১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর দেশটি একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

কাতারের জাতীয় পতাকা

কাতারে জাতীয় পতাকা একটি দ্বীবর্ণ বিশিষ্ট আয়তাকার পতাকা। পতাকাটি সাদা ও মেরুন রঙের সংমিশ্রণে ডিজাইন করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৯ জুলাই কাতারের বর্তমান পতাকাটির নকশা গ্রহণ করা হয়েছে। কাতারের পতাকার নকশা বাহরাইনের জাতীয় পতাকার অনুরূপ তবে অনুপাত ও রঙের দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে। পতাকাটির অনুপাত ১১:২৮।

এটি বিশ্বের একমাত্র পতাকা যার প্রস্থ ও দৈঘ্যের অনুপাতের দ্বিগুণেরও বেশি। পতাকা দণ্ডের দিকের অখশটি সাদা রঙের ৯ টি ত্রিভুজ আকৃতির খাঁজকাটা ডিজাইন এবং ডিজাইনের অপর প্রান্তের অংশটুকু মেরুন রঙের। তবে পাতাকাটির মেরুন প্রান্তটুকু লাল রঙের করার পরিকল্পনা ছিল।

প্রথম বারের মতো ডিজাইনার পতাকায় রঙ করে রোদে শুকাতে দিয়েছিল, আর পতাকার লাল অংশটুকু রোদে পুড়ে মেরুন বর্ন ধারণ করেছিল । ঠিক সেই মুহুর্তে ডিজাইনেরর মনে হলে মেরুন বর্নটিই বেশি গ্রহনযোগ্য, আরসেই থেকে কাতারের জাতীয় পতাকার রঙ সাদা ও মেরুন।

পতাকার সাদা রঙটি শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত এবং মেরুন রঙটি কাতারের বিভিন্ন যুদ্ধের প্রতীক। নয়টি সাদা শীর্ষযুক্ত খাঁজকাটা বক্ররেখাটি- আমির-শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে নবম স্থানে অবস্থিত কাতারকে নির্দেশ করে।

কাতারের প্রচলিত ভাষা

কাতারের সরকারি ভাষা আরবি এবং দেশটির অধিকাংশ লোকজনই আরবি ভাষায় কথা বলে। প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও আরবি ভাষাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে কাতারে প্রচলিত আরবি ভাষার মধ্যেও বিভাজন রয়েছে। একটি প্রমিত আরবি ভাষা এবং আরেকটি আঞ্চলিক কথ্য আরবি ভাষা।

প্রধান শহর ছাড়া আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সাধারণত কথ্য আরবি ভাষাতেই কথা বলে। আরবির পরেই কাতারের দ্বিতীয় উপভাষা হিসেবে ইংরেজিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ব্যবসায়ীক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ইংরেজি ভাষার ওপরে নির্ভরশীল।

তাছাড়া কাতারে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী জনবল নিয়োগ করে শিল্প কারখানা ও অন্যান্য খাত পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের প্রবাসী শ্রমিকেরা মত বিনিময়ের জন্য ইংরেজি ভাষার ওপর নির্ভরশীলত। এছাড়াও অন্যান্য ভাষাভাষীর বিভিন্ন লোকজন কাতারে বসবাস করে।

কাতারে প্রচলিত বিভিন্ন বিদেশী ভাষা গুলোর মধ্যে উর্দু, বেলুচি, মালায়ালাম, পশতু, হিন্দি, তেলেগু, তাগালগ, তামিল, সিংহলি, নেলাপি এবং বাংলা ভাষা উল্লেখযোগ্য।

কাতারের নাগরিকদের ধর্ম বিশ্বাস

কাতারের রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম এবং এই দেশের সিংহভাগ মানুষই ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে। দেশের বেশিরভাগ আইনকানুন ইসলাম ধর্মের নিয়মানুযায়ী প্রবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ইসলামিক মতাদর্শে পরিচালিত হয়। মুসলমানদের মধ্যে বেশিরভাগই সুন্নি সম্প্রদায়ের।

মোট মুসলিম নাগরিকদের শতকরা ১০ ভাগ শিয়া সম্প্রদায়ের এবং বাকি ৯০ ভাগই সুন্নি মুসলমান। কাতারের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৫.৫ ভাগ মুসলমান। এরপরে আছে হিন্দু সহ অন্যান্য ধর্মের লোক। মূলত এরা কাতারে শ্রমিক হিসাবে যাওয়া ভারত এবং অন্যান্য দেশের নাগরিক।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়। মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৫.৪ ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের, শতকরা ১৪.২ ভাগ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের, শতকরা ৩.৩ ভাগ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। এছাড়াও কাতারে মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়া থেকে আসা অনেক আঞ্চলিক ধর্মের অনুসারী লোকজন বসবাস করে। তবে কাতারের স্থানীয়দের মধ্যে প্রায় সকলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর লোকজন সাধারণত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছে।

কাতারে অর্থনীতি

কাতারের অর্থনীতি মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম এই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ১৯৪০ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার আগে এই দেশের অর্থনীতি পুরোপুরিভাবে কৃষি ও মুক্তার ওপরে নির্ভরশীল ছিল।

১৯৪০ সাল থেকে শুরু হওয়া পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্পের কারনে একচেটিয়াভাবে কাতারের অর্থনীতির ব্যপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। বর্তমানে দেশটি তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের শীর্ষ রফতানিকারী দেশ। তবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিদেশী শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য।

দেশটির মোট শ্রমিকের শতকরা ৮৬ ভাগই অভিবাসী শ্রমিক। মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৯৪ ভাগই অভিবাসী শ্রমিকদের দ্বারা রচনা করা হয়। কাতার সরকার খনিজ শিল্পের ওপর একচেটিয়া ভাবে নির্ভরশীল না হয়ে অন্যান্য শিল্প খাতে ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সেক্টরে দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

কাতার বর্তমানে ব্যাংকিং এবং অর্থ, পর্যটন, নির্বাহী, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি জিডিপিতে আরও বেশি অবদান রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অবকাঠামোগর উন্নয়নেত ক্ষেত্রে কাতার এশিয়া মহাদেশ তথা পুরো বিশ্বে বেশ সুপরিচিত একটি দেশ।

কাতারের আবহাওয়া ও জলবায়ু

কাতারে একটি উষ্ণমণ্ডলীয় মরুভূমির জলবায়ু বিদ্যমান। দিনের বেলা প্রচন্ড গরম এবং রাতে আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে। গ্রীষ্মকালে কখনও কখনও এর তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যেতে দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে কাতারের গড় তাপমাত্রা থাকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর কাছাকাছি এবং শীতকালে তা নেমে পৌঁছায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও নিচে।

গ্রীষ্মের সময় বাতাস খুবই শুষ্ক এবং ধুলাময় থাকে। অন্যদিকে শীতের সময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান বেশি থাকে এবং বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কাতারের আবহাওয়া সবচেয়ে উষ্ণ থাকে। বাকি সময়গুলো তুলনামূলক ঠান্ডা আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়।কাতার ভ্রমণের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। কাতারে বছরে চারটি ঋতুর আনাগোনা লক্ষ করা যায়।

যথা: বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ এবং শীতকাল। তবে গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুর বৈশিষ্ট্যগুলো খুব প্রবলভাবে লক্ষ করা যায়। বাকি ঋতু গুলো নজরের আড়াল থেকেই আসে এবং চলে যায় বললেই চলে ।

শীতের মাঝেই কখনও কখনও বর্ষার আবহাওয়া অনুভব হয়। গরমের সময় আবহাওয়া বেশ শুষ্ক থাকে বলে প্রায়ই বালির ঝড় হতে দেখা যায়। এটি মরুভূমি অঞ্চলের সাধারণ এবং ভয়াবহ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

কাতারের সংস্কৃতি

কাতারের সংস্কৃতি প্রাচীন বেদুইন সংস্কৃতি দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত। লোকজ সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে উপকূলীয় পরিবেশের প্রভাবও ব্যপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। কাতারের প্রাচীন সংস্কৃতির বেশিরভাগই মৌখিকভাবে প্রচলিত হতে হতে নানা উত্থান পতনের পরে বর্তমান আধুনিক কাতারি সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে।

মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় কাতারের সংস্কৃতিতে রক্ষনশীলতার নীতি ব্যপকভাবে প্রভাব ফেলে। দৈনন্দিন ওঠা বসা, খাওয়া পড়া, সামাজিক ক্রিয়াকলাপ সব কিছুতেই কঠোরভাবে ইসলামিক আইন মেনে চলা হয়।

কাতারের সমাজব্যবস্থা খুবই শান্তিপূর্ণ এবং পরিকল্পিত। কাতারের সমাজ গড়ে উঠেছে পরিবার ভিত্তিক। পরিবারের সকল সদস্য একত্রে মিলেমিশে একটি আনন্দময় পরিবেশে বসবাস করে এবং শিশুদের যত্নে অনেক বেশি গুরুত্ব প্রদান করে। তবে বর্তমানে কাজের ক্ষেত্রে বড় পরিবারগুলো আস্তে আস্তে ভাগ হয়ে ছোট ছোট পরিবারের সৃষ্টি করছে। তবে সামাজিক ভাবে কাতারের বাসিন্দারা একে অপরের ওপর খুবই সহনশীল এবং আন্তরিক।

শিক্ষার দিক থেকে কাতারের নাগরিকদের খুবই জোরালোভাবে প্রচেষ্টা রয়েছে। পুরো পৃথিবীর মধ্যে কাতার ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার পেছনে মাথাপিছু খরচ সবথেকে বেশি করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দানের সময় ছেলে মেয়ে পৃথক পৃথক করে পাঠদান করা হয়। এবং ইউনিফর্ম হয় যথেষ্ট শালীন ও মার্জিত।

ছেট পোশাক বা দেখতে কটু লাগে এমন খোলামেলা পোশাক পড়ে কাতারে চলাফেরা করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কেউ এই নিয়ম অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। ড্রেস কোড এর এই আইনটি “আল-আধিদ” নামে একটি সরকারী সংস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়।

কাতারি পুরুষরা ঢিলেঢালা প্যান্টের উপরে থাবস নামক এক ধরনের লম্বা সাদা শার্ট পরে। অন্যদিকে কাতারি মহিলারা সাধারণত ইসলামিক ধাচের পোশাক পরিধান করে। যেমন: কালো রঙের আবায়া, হোক স্কার্ফ, নিকাপ সহ পুরো শরীর আবৃত বিভিন্ন ধরনের পোশাক।

কাতারের পরিচিত খাবার

কাতারের খাদ্যাভ্যাস অনেকটা এরাবিক ধাচের। রন্ধন শৈলীর বেশিরভাগ পদ্ধতিই আরব দেশগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কাতারের জাতীয় খাবার হলো মাচবুস। এটি সুগন্ধি চাল, মাংস এবং শাকসবজি সমন্বিত একটি খাবার। সাধারনত ভেড়ার মাংস বা মুরগির মাংস দিয়ে মাচবুস তৈরি করা হয়। সামুদ্রিক খাবার এবং খেজুর কাতারের নাগরিকদের খাদ্য তালিকায় প্রধান আইটেম।

এই দেশের রন্ধনপ্রণালীতে বিভিন্ন ধরনের মসলার মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। উল্লেখযোগ্য একটি মসলার মিশ্রণ হলো বিজার, যা কালো মরিচ, ধনে বীজ, দারুচিনি, লবঙ্গ, শুকনো আদা, গোটা এলাচ, শুকনো লাল মরিচ এবং হলুদের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়। আরও একটি জনপ্রিয় মসলা হলো হিসো, যা আদা, দারুচিনির, এলাচের বীজ, গোটা কালো মরিচ, হলুদ এবং জিরার সংমিশ্রণে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।

কাতারের জনপ্রিয় কিছু খাবার হলো: মাকবুস, ঘুজি, হারিস, জারেশ, থারেদ ইত্যাদি। কাতারের সবথেকে জনপ্রিয় পানীয় হলো কফি। ডার্ক রোস্ট কফি বীজ থেকে তৈরি বিশেষ এই কফিকে এলাচ দিয়ে তৈরি করে খেজুরের সাথে পরিবেশন করা হয়। আরেকটি জনপ্রিয় পানীয় হলো কারাক, এটি মূলত দুধ চা যা বিভিন্ন মসলা ও দুধের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়। কাতারের জনপ্রিয় ডেজার্ট আইটেম গুলোর মধ্যে আছে: লুগাইমাত, খবিস, অসিদা, বালালেত, সাগু, উম আলী, মাচবুস ইত্যাদি।

কাতারের দর্শনীয় স্থান

qatar

পর্যটন শিল্পের জন্য কাতার পুরো বিশ্বে নিজের খ্যাতি অর্জন করেছে।কাতারের বিখ্যাত জলক্রীড়া, শিল্প, সংস্কৃতি এবং দর্শনীয় স্থানগুলো বিশ্বের ভ্রমনপিপাসু পর্যটকদের সারা বছর জুড়েই হাতছানি দিতে থাকে। কাতারে ঘুরে দেখার মতো অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে তুলে ধরা হলো :

১. মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট

কাতারের দোহায় অবস্থিত জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান এটি। মূলত চারটি প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম নিয়ে জাদুঘরটি স্থাপিত হয়েছে। প্রাচীন বাড়িগুলো হলো: বিন জেলমুদ হাউস, মোহাম্মদ বিন জসিম হাউস, কোম্পানি হাউস এবং রাদওয়ানি হাউস।

২. রাদওয়ানি হাউস

মাথাফ আরব মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টে এর চারটি ঐতিহাসিক নিদর্শন সমৃদ্ধ বাড়ির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাদওয়ানি হাউস যা ১৯২০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। পুরোনো ধাচেী রান্নাঘর, উঠান, বসার ঘর এবং বাড়ির অন্যান্য এলাকা যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

৩. কাতার জাতীয় জাদুঘর

কাতার জাতীয় জাদুঘর মূলত একটি ভাসমান জাদুঘর যা এর নিখুঁত স্থাপত্য শৈলীর জন্য পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত। জাদুঘরটিতে মোট ১১ টি গ্যালারী, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ এবং একটি পার্ক রয়েছে।

৪. কাটারা সাংস্কৃতিক গ্রাম

কাতারের একটি ঐতিহাসিক গ্রাম কাটারা সাংস্কৃতিক গ্রাম। এখানে ভ্রমনের মাধ্যমে একজন পর্যটক উপলব্ধি করতে পারবেন যে কীভাবে দোহা একটি প্রত্যন্ত গ্রামীণ পরিবেশ থেকে উঠে এসে আজকের আধুনিক চাকচিক্যময় শহরে পরিনত হয়েছে। এখানে একটি থিয়েটার, বাগান, দুটি চমৎকার ডিজাইনের মসজিদ, বেশ কিছু আর্ট গ্যালারী সহ আরও অনেক কিছু আছে উপভোগ করার মতো।

৫. মিউজিয়াম অফ ইসলামিক আর্ট

কাতারের সবথেকে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান মিউজিয়াম অফ ইসলামিক আর্ট। এটি একটি দ্বীপের ওপর এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে দেখতে মনে হয় মিউজিয়ামটি পানির ওপর ভাসমান। মূলত ভারত, চীন, স্পেন, ইরাক, তুরস্ক ইত্যাদি দেশ থেকে সংগৃহীত টেক্সটাইল, মৃৎশিল্প, কাচের কাজ সহ বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এর এক বিশাল সমাহার এই জাদুঘরটি।

৬. আল জুবারাহ ফোর্ট

কাতারের আরেকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন আল জুবারাহ ফোর্ট। আল জুবারাহ ফোর্ট ঠিক কবে নির্মান করা হয়েছিল তার সঠিক তথ্য অজানা। তবে অনেকে বিশ্বাস করেন যে দুর্গটি ১৭ থেকে ১৮ শতকের মধ্যে যে কোনো সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। দুর্গটির ছাদের গঠন, বাঁকানো দেয়াল, গোলাকার কোণ এবং বর্গাকার কোণার টাওয়ারের অবস্থান নিঃসন্দেহে অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর পরিচয় বহন করে।

৭. কোম্পানি হাউস

কোম্পানি হাউস কাতারের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি মূলত তেল শিল্পের কর্মীদের জন্য উত্সর্গীকৃত। কাতারের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি যারা, তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে এই পর্যটন কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।

পর্যটন, শিল্প, সংস্কৃতি, অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ দেশ কাতার বিশ্ব মঞ্চে স্বনামধন্য একটি দেশ হিসেবে পরিচিত। কীভাবে শূন্য থেকে উঠে এসে অল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা যায় তার প্রমাণ দিতে পেরেছে দেশটি।

Scroll to Top