আপনি যখন মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের কথা চিন্তা করেন, তখন আপনি প্রচন্ড গরম আবহাওয়ার কথা ভেবে থাকবেন হইতো যা নিঃসন্দেহে মোটেও ভ্রমন করার জন্য সুবিধার না। তবে মজার কথা হলো কাতারে তা হয় না। এখানে জুলাই মাসে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়৷ এটি কাতারের উষ্ণতম মাস। তা ছাড়া বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা প্রায় ৩০° থাকে। বলে রাখা ভালো এখন কিন্তু বাংলাদেশেও ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ক্রস করে ফেলছে!
জানুয়ারীতে, তাপমাত্রা ১২ থেকে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে চলে যায়। এছাড়াও, আপনি ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি দেখতে পেতেও পারেন। বুঝতেই পারছেন আপনি আপনার মনকে খুশি করতে দুর্দান্ত আবহাওয়া সহ গ্রীষ্মের ছুটি উপভোগ করতে পারবেন কাতারে।
কাতারে ভ্রমনের অন্যতম একটি ভালো দিক কি জানেন? এই দেশ ঘুরে দেখতে আপনাকে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে না, কিছু চুরি হলো কিনা এই চিন্তা থেকে অনেকটাই স্বাধীন থেকে আরাম করে ঘুরতে পারবেন যা অন্য কোন দেশে তেমন পাবেন না। কাতার ইসলামিক দেশ হওয়ায় এবং অপরাধের শাস্তি কঠোর এজন্য এখানে অপরাধ কম। তাছাড়া তাদের অর্থনীতিও ভালো তাই চুরি ডাকাতি করে জীবিকা খোজার প্রয়োজন হয় না। কেউ এমনিতেই ভালো লাইফ লিড করতে পারলে চুরি করে হাত কাটার রিস্ক কে নিবে তাই না?
- আরো দেখুনঃ ভিসা চেক করার নিয়ম
কাতারের সংস্কৃতি
দোহার ইসলামী শিল্প জাদুঘরে আপনি কয়েক ঘন্টার মধ্যে ১৪ শতাব্দীর ইসলামিক শিল্প সংগ্রহ দেখতে পাবেন। শিল্পকর্ম থেকে ইসলামিক সংস্কৃতি দেখতে পাবেন যা শুধুমাত্র এই জাদুঘরে ছাড়া আর কোথাও নাও পেতে পারেন।
কাতারে অসংখ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে যেখানে আপনি ভালো সময় কাটাতে পারেন এবং আধুনিক ও প্রাচীন শিল্পের সৌন্দর্যে উপভোগ করতে পারবেন।
কাতারে বিলাসি জীবন
কাতার বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। সুতরাং তাদের বিলাসবহুল লাইফস্টাইল আশা করতেই পারেন । এটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হলেও বিলাসবহুল হোটেলগুলি সহ চমত্কার দৃশ্য উপভোগ করার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পরিপূর্ণ।
তাছাড়া, আপনি সারা বিশ্ব থেকে বিশ্বের সেরা মানের খাবার এখানে পাবেন। শুধু খাবার? সমুদ্র সৈকত সহ বেশ কিছু থিম পার্ক আছে কাতারে যা আপনার ভ্রমন কে স্মরণীয় করে রাখবে। আর কাতারের শপিং মলের কথা না বললেই নয়। কাতারের আধুনিক শপিংমল গুলো পৃথিবীর অন্যতম।
কাতারে অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করবেন কিভাবে কোথায়?
অনেকে আছে কোথাও ঘুরতে গেলে খুবই ভদ্র সাদামাটা ভ্রমন শেষ করে। আবার অনেকে আছে দেশ বা বিদেশ যেখানেই যাক না কেনো সে সেখানকার বিভিন্ন অলি গলি পাহাড় পর্বত ঘুরে বেড়ায়। এরা এডভেঞ্চার প্রিয়। কাতারে গেলে আপনিও সেখানকার এমন কিছু লোকেশন পাবেন যা এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য ভালো সুযোগ।
কাতারের প্রাকৃতিক বিস্ময়
শুধুমাত্র বিলাসিতা কিংবা মরুভূমির জন্যই কাতার এমন না কিন্তু। এসব ছাড়াও কাতারে আরো কিছু প্রাকৃতিক স্থান আছে যা আপনাকে বিস্মিত করে দিতেও পারে।
টিলা
বাংলাদেশে পাহাড়ি টিলার সাথে আমাদের অনেকেই পরিচিত। কিন্তু কাতারে দেখতে পাবেন বালুর টিলা। আপনি যদি কেবল কাতারের টিলা দেখতে যা তাও লস নেই। কারন মরুভুমির টিলাতে আপনি যখন সূর্যাস্ত কিংবা রাতের তারা দেখতে পাবেন তখন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কেন লস নেই বলেছি।
- আরো দেখুনঃ মালেশিয়া ভ্রমন গাইড
আল থাকিরা ম্যানগ্রোভস
আপনি কি কখনও কাতারে একটি ম্যানগ্রোভ দেখার কথা ভেবেছেন? আপনাকে খুশি করার জন্য আল থাকিরা ম্যানগ্রোভগুলির মধ্যে একটি। এটি কায়াকিং করার জন্য অন্যতম একটি জায়গা।
আর এই ম্যানগ্রোভে বিভিন্ন পাখির বাস তাই আপনি কায়াকিং করতে করতে পাখির ডাকও ইঞ্জয় করতে পারবেন। বলে রাখা ভালো এটি আল খোর শহরের উত্তর দিকে অবস্থিত।
দাহল আল মিসফির গুহা
৪০মিটার দীর্ঘ এই গুহা টুরিস্টদের আকর্ষণ করে। মজার কথা হলো এই গুহা ঘুরে দেখতে কোন ফি দেওয়া লাগে না। জিপসাম ধাতুর কারনে এই গুহার ভিতরে চাঁদের আলোর মত আলো দেখা যায় যা আসলেই সুন্দর ব্যাপার।
কাতারের গাছপালা ও প্রাণী
তাপমাত্রা তেমন বেশি না হলেও কাতার মরুভূমির একটি শুষ্ক দেশ। তাই আপনি এখানে তেমন বেশি উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগত দেখতে নাও পারেন। বৃষ্টির পর মরুভূমি সবুজ হয়ে ওঠে তখন আপনি এখানে বেশ কিছু প্রানি দেখতে পাবেন এর মধ্যে রয়েছে পাখি, সরীসৃপ, শিয়াল ইত্যাদি।
সমুদ্র
মরুভূমির কারণে কাতারে কৃষিকাজের সম্ভাবনা কম। এজন্য এখানকার বেশিরভাগ জীবিকা আসে সমুদ্র থেকে। কাতারে একটি ৫৬০ কিলোমিটার উপকূলরেখা রয়েছে, যার ফলে মানুষ মাছ ধরা এবং মুক্তা সংগ্রহ করার মাধ্যমে জীবনযাপন করে।
কাতারের খাবার
আপনি যদি এক স্থানে ঘুরতে এসে দুনিয়া ব্যাপি প্রসিদ্ধ সব খাবারের স্বাদ নিতে চান তাহলে কাতারে আসতে পারেন। এখানে আপনি পাবেন ওয়েস্টার্ন থেকে চাইনিজ, ইন্ডিয়ান থেকে আফগান সব ধরনের খাবার ই পেয়ে যেতে পারেন কাতারে।
মাচবুস
কাতারের ঐতিহ্যবাহী খাবারের কথা ভাবলে প্রথমেই মনে আসে এই নামটি। মসলাযুক্ত ভাতের সাথে রান্না করা গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, উট এবং মুরগির মাংস। আর এটি কাতারের লোকাল মানুষদের জাতীয় খাবার। অতএব, আপনি কাতারের আশেপাশে সর্বত্র এই খাবারটি পাবেন।
সালোনা
এটি কাতারের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। গরুর মাংস কে ভাজা বা রান্নার পরিবর্তে অনেকটা সুপ এর মত করে রান্না করা হয়। নানা রকম মসলা থাকার কারনে ঘ্রান থাকে এই খাবারে। এটি কাতারের বিভিন্ন হোটেলে পেয়ে যাবেন আশা করি।
লুকাইমাত
আমাদের দেশে যেমন বিরানি কিংবা এমন ভারি খাবারের সাথে মিষ্টি জাতীয় খাবার দেওয়া হয় তেমনি কাতারের পরিচিত একটি মিষ্টি খাবার হলো লুকাইমাত।এটি মাখন, দুধ, ময়দা, চিনি, জাফরান এবং এলাচ দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে।
কাতারের স্থাপত্য
যেহেতু এটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সাথে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার একটি দেশ তাই আপনি এখানে এর মিশ্রণ দেখতে পাবেন। এছাড়াও, আপনি কাতারের চারপাশের স্থাপত্যের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য দেখতে পাবেন।
দোহা টাওয়ার
এটি দোহার আইকনিক বিল্ডিং, যাকে বুর্জ দোহাও বলা হয় এটি এখানে কাতারের সর্বোচ্চ ভবনগুলির মধ্যে একটি। এটি ২৩৮ মিটার উঁচু এবং ৪৯ তলা বিল্ডিং যার ৪৬ মাটির উপরে এবং তিনটি মাটির নিচে অবস্থিত।
অ্যাসপায়ার টাওয়ার
এই বিল্ডিংটি দোহা টাওয়ারের চেয়েও লম্বা যা বিশাল ৩০০ মিটার লম্বা। আর এটিকে ঘিরে পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে। সৌন্দর্যের দিক থেকে এটি দোহা টাওয়ারের মতোই সুন্দর।
কাতারের জাতীয় জাদুঘর
জাদুঘর পরিদর্শন এবং বিভিন্ন শিল্প ও নিদর্শন দেখার একটি স্থান হলেও আপনি কাতারের এই জাদুঘরের ভবনের স্থাপত্য কাজের সৌন্দর্য উপেক্ষা করতে পারবেন না। ডিস্ক আকৃতির নকশা টুরিস্টদের আকর্ষণ করে থাকে। এই জায়গায় প্রবেশ করতে এবং ভিতর থেকে জাদুঘরটি দেখতে আপনাকে ৫০ কাতারি রিয়াল খরচ করতে হবে।
কাতার ভ্রমনে খরচ
কাতার ধনী দেশ এবং এখানকার সুযোগ সুবিধাও আধুনিক এজন্য স্বাভাবিক ভাবেই কাতারে ভ্রমন করাটা কিছুটা ব্যয়বহুল হবে। তবে আপনি যদি বিলাসী ভাবে ভ্রমন না করে বরং বাজেটের মধ্যে কাতার ঘুরে আসতে চান তারও সুযোগ আছে। বাজেট ফ্রেন্ডলি প্যাকেজ পেয়ে যেতে পারেন। অর্থাৎ আপনি চাইলে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে পারেন আবার লাখ টাকার মধ্যেও ঘুরে দেখতে পারেন।
কাতারে রোড ট্রিপ
কাতার ছোট দেশ। বলতে পারেন আমাদের দেশের একটি জেলার সমান। এজন্য কাতারে রোড ট্রিপ আসলেই কার্যকরী। কারন? রোড ট্রিপের মাধ্যমে আপনি কাতারের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন স্পট গুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।
কাতার কি ক্যাম্পিং করার উপযুক্ত?
কাতারে আপনার বাজেটের মধ্যে ক্যাম্প করার জন্য অসংখ্য ক্যাম্পসাইট রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কাতার ক্যাম্প করার জন্য উপযুক্ত। এখানে আপনি বিভিন্ন ট্যুর কোম্পানি দেখতে পাবেন যারা আপনার বাজেটের মধ্যে ক্যাম্পিং করার ব্যবস্থা করে দিবে। আপনি নিরাপদে ক্যাম্পিং করে এই সুন্দর দেশটি উপভোগ করতে পারেন।
কাতার বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ দেশ। সুতরাং আপনি আপনার নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে আপনার আশেপাশে কোন মানুষ না রেখে মরুভূমির মাঝখানে থাকতে পারেন।
কাতারে ক্যাম্প করার আদর্শ সময় শীতকালে। গরম তাপমাত্রা নিয়ে আপনার যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে গ্রীষ্মে আপনার কখনই ক্যাম্পিং করা উচিত নয় কারন তখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত যেতে পারে।
কাতারের সমুদ্র সৈকত
গ্রীষ্ম হোক বা শীত, সমুদ্র সৈকত সবসময়ই মজাদার। এবং কাতারের সমুদ্র সৈকতগুলি আপনার চারপাশের সমস্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পরিপূর্ণ সবচেয়ে সুন্দরগুলির মধ্যে একটি। আপনি যদি কাতারে যান তবে আপনার সমুদ্র সৈকতে যাওয়া উচিত।
কাতারের ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি সমুদ্র সৈকত রয়েছে যার কাছাকাছি বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে।এছাড়াও আপনি আপনার অ্যাডভেঞ্চার অভিজ্ঞতার জন্য স্কুবা ডাইভিং করতে পারেন।
ছবিঃ Canva
