কলকাতার দর্শনীয় স্থান সমূহ এবং বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার উপায়

বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারতের মধ্যে প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ। সেই পশ্চিমবঙ্গের মূল কেন্দ্রবিন্দু তে একটি শহর রয়েছে, যে শহরটিকে আমরা “আনন্দের নগর” অথবা “দ্যা সিটি অব জয়” নামে চিনি। শহরটির নাম হচ্ছে “কলকাতা”

হুগলি নদীর তীরে গড়ে ওঠা কলকাতা নামক এই শহরটি বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা, নজরকাড়া স্থাপত্য এবং ভারতবর্ষের সোনালী ও বৃটিশ আমলের শত শত ইতিহাসের সাক্ষী। তাই একজন পর্যটকের কাছে কলকাতা এবং কলকাতার দর্শনীয় স্থান সমূহ বেশ আকর্ষণীয় স্থান। যেহেতু বাংলাদেশের গা ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অবস্থান তাই বাংলাদেশীরা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে এবং দর্শনীয় শহর হিসেবে কলকাতা শহরটিকে তাদের পছন্দের শীর্ষ স্থানেই রাখেন।


কেনাকাটা থেকে শুরু করে চিকিৎসা, ঘুরা-ফেরা, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ সকল যাবতীয় জিনিস বেশ স্বল্প খরচে করা যায় বলেই কলকাতা শহরে বেশ ভাল পরিমাণেই বাংলাদেশীদের আনাগোনা দেখা যায়। তাই ঘুরতে যাওয়ার আগে আপনার যদি কলকাতার দর্শনীয় স্থান সমূহ অথবা কলকাতা শহরে যাওয়া আসা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা থাকে তাহলে আপনি বেশ স্বাচ্ছন্দেই এবং স্বল্প খরচে কলকাতায় ঘুরে আসতে পারবেন। 


আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আরো সহজ করে তোলার জন্য আজ আমরা কলকাতার দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা দিব ইন শা আল্লাহ। পাশাপাশি ঢাকা থেকে কিভাবে কলকাতা যাবেন, ভালো থাকার হোটেল কোনগুলো এবং থাকার ভাড়া কত হতে পারে, মূল আকর্ষণ কি কি, সেইসাথে আর্টিকেলটি পড়ার পড় কলকাতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কেও জানতে পারবেন।

কলকাতার দর্শনীয় স্থান সমূহ

যেহেতু এই শহরের নামের সাথেই যুক্ত রয়েছে “আনন্দের নগর” সেহেতু এই শহরে দেখার মত অথবা উপভোগ করার মত অনেক কিছুই রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। কলকাতা শহর এর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসাধারণ দর্শনীয় স্থান সমূহ, যা আপনার মনকে তৃপ্তি এবং আপনার অভিজ্ঞতাকে দেবে রোমাঞ্চের ছোঁয়া। 

hotel booking


এই শহরটিতে আপনি পায়ে হেঁটে হোক অথবা মেট্রোতে চেপে, বাস ধরে হোক অথবা ঐতিহ্যবাহী সেই হলুদ ট্যাক্সি তে বসে, যেভাবেই আপনি ঘুরতে চান না কেন মূলত সব জায়গাতেই আপনি বেশ ভালো ভালো দর্শনীয় স্থান সমূহ গুলো পেয়ে যাবেন। তাই কলকাতা শহরে ঘুরতে গেলে যেসব দর্শনীয় স্থানসমূহ গুলো আপনার মিস করা একেবারেই উচিত হবে না, নিম্নে সেগুলো বিবরণ সহ লিস্ট আকারে উল্লেখ করছি।

১. হাওড়া ব্রিজ

হাওড়া ব্রিজ

বিশ্ব বিখ্যাত এই হাওড়া ব্রিজটির ব্যাপারে কে না জানে! আপনার নিজেরও হয়তো ইচ্ছে রয়েছে যে, এই হাওড়া ব্রিজে একদিন যাব। তাই কলকাতা শহরে এলে এই অসাধারণ স্থাপত্যটি দেখতে একেবারেই ভুলবেন না। দৃষ্টিনন্দন ব্রিজটি দেখলে আপনি একপর্যায়ে অবাক হবেন আর ভাববেন যে কোন রকমের পিলার ছাড়া এই ব্রিজটি দাঁড়িয়ে আছে কিভাবে, মূলত এটাই এই ব্রিজটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

২. গঙ্গার ঘাট / পাড়

নদীর পাড়ে বসে হাওয়া খাওয়ার আনন্দটাই কত আলাদা, কে না চায় এরকম একটি আনন্দঘন মুহূর্তে সময় পার করতে। তার সাথে যদি পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের ঢলে যাওয়া দেখা যায় তাহলে ভেবে দেখুন কতটাই না রোমাঞ্চকর হবে অভিজ্ঞতা টি। আর সেটি যদি বিশ্ব বিখ্যাত গঙ্গা নদী হয় তাহলে আপনার রোমাঞ্চ হবে দ্বিগুণ। কলকাতা শহরে এরকম অনেক গঙ্গার ঘাট বা পার রয়েছে, অনেকেই ভাবে যে কোন ঘাটে বসলে বেশি ভালো ভিউ পাওয়া যাবে। তাই পুরোপুরি আনন্দ নিতে আপনি বাগবাজার ঘাট, বাবু ঘাট এবং প্রিন্সেপ ঘাট এ যেতে পারেন।

kolkata places


পড়ন্ত বিকেলের পর সূর্যের আলো নিভে যখন আকাশ রাতের অন্ধকারে ঘনিয়ে যায় তখন কি আনন্দটাই না লাগে গঙ্গার পাড়ে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিতে। বিকেল থেকেই প্রিন্সেপ ঘাট এ ভোজন রসিকদের জন্য অনেক রকমের খাবার বসে, সেগুলো টেস্ট করতে ভুলবেন না!

৩. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

রানী ভিক্টোরিয়ার নাম তো সবাই শুনেছেন! সেই রানী ভিক্টোরিয়ার স্মরণে বেশ আকর্ষণীয় এবং অপরূপভাবে তৈরি করা সাদা মার্বেল দ্বারা তৈরি কলকাতার এই দুর্গটি্র সামনে যখন আপনি দাঁড়াবেন আপনার চোখ নিশ্চিতভাবে জ্বলজ্বল করে উঠবে। আপনাকে কিছু সময়ের জন্য ভাবিয়ে তুলবে যে মানুষের হাতের তৈরি স্থাপত্য এতটা সুন্দর হতে পারে!
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল অনেক বড় জায়গা জুড়ে অবস্থিত। আপনি ভবনটির ভিতরে গিয়ে ঐতিহাসিক অনেক স্বাক্ষীর ঝলক নিয়ে বাহিরে এসে সবুজ গালিচায় বসে বেশ ভালো একটি সময় কাটাতে পারেন।

৪. ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম

এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এবং প্রাচীন এই ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম যেখানে আপনি মিশরীয় মমি থেকে শুরু করে আরো অনেক প্রাচীন ভাস্কর্য প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পারবেন। ধর্মতলা থেকে হাঁটা পথে আপনি মিউজিয়াম টিতে যেতে পারবেন।

৫. রবীন্দ্র সদন

indian places

সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতার এই দর্শনীয় স্থান বেশ বিখ্যাত। অনেকেই এখানে নিজের মন মত সময় কাটাতে আসেন একা একাই কারণ আপনি যেভাবে আছেন সেভাবেই এটির পরিবেশ আপনাকে সাদরে গ্রহণ করে নিবে। চারপাশে বিভিন্ন জাতের গাছপালার সমরহে এবং লেক থেকে আসা মৃদু বাতাস আপনার বিকাল টিকে চির স্মরণীয় করে রাখতে পারবে।

৬. আলিপুর চিড়িয়াখানা

কলকাতার অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি একটি। মোট ৪৫ একর জমি জুড়ে ১৮৭৬ সালে নির্মিত হয় এই আলিপুর চিড়িয়াখানা। প্রাচীন প্রাণী থেকে শুরু করে এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী, জীব-জন্তুর দেখা পাবেন যেটি আপনার অবসর সময় গুলোকে বেশ রোমাঞ্চকর করে তুলতে পারে।

৭. গড়ের মাঠ

অনেকে এটিকে ময়দান বলে চিনে আবার অনেকে শখ করে এই স্থানটিকে বলে গড়ের মাঠ। মৌসুম যেটাই হোক এই স্থানটিতে আপনি সবসময় লোকজনের আনাগোনা দেখবেন কারণ, এই জায়গাটি এতটাই সুন্দর যেখানে বসে মানুষ সাদা মার্বেলের তৈরি জ্বলজ্বল করা ভিক্টোরিয়া ভবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে এবং হাতে বাদাম বা ঝালমুড়ি নিয়ে সবুজ ঘাসের মাঝে বসে নিজেদের বিকেলটা বেশ আনন্দঘন পরিবেশে মুহূর্তেই কাটিয়ে দেয়। ফটোশুটের জন্য কলকাতার এই স্থান একটি পারফেক্ট চয়েজ হতে পারে আপনার কাছে।

৮. কলেজ স্ট্রিট

এটি কলকাতার এমন এক স্থান যেখানে আসলে আপনার কানে বিভিন্ন আওয়াজ ভেসে আসবে আর সেই আওয়াজগুলো বিভিন্ন সময়ের, বিভিন্ন বইয়ের। এখানে এলে আপনি কলকাতার ইতিহাস চোখের সামনে ভাসিয়ে তুলতে পারবেন আপনার মনে হবে আমি হাজারো বইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি এক সংগ্রামী যোদ্ধা হয়ে। ইতিহাস গুলো নিজের মাঝে জমিয়ে রেখেছে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি যেটির দর্শন আপনি এখানেই পাবেন। কলকাতা এলে এই জায়গাটিতে ঘুরতে কেউ ভুলবেন না।

৯. কফি হাউস

কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই! হ্যাঁ, এই কফি হাউসকে ডেডিকেট করেই গানটি তৈরি হয়েছে যেটি আপনি কলেজে স্ট্রিট এই পাবেন। আলাদাই একটা ভাব আসবে যখন আপনি এই স্থানটিতে ঘুরে আসবেন। গরম কফির চুমুকে চমকে মনে করে নিতে পারেন সেই আগের সোনালী দিনগুলো।

৯. ইডেন গার্ডেন

যারা ক্রিকেট লাভার আছেন তারা অবশ্যই এই জায়গাটির সাথে পরিচিত। আর যারা ক্রিকেট দেখেন না, তাদের কাছেও কলকাতার বিখ্যাত এই স্থানটির নাম নিশ্চয়ই প্রথমবার শুনছেন না। এই স্টেডিয়ামে আই.পি.এল থেকে শুরু করে ক্রিকেট জগতের অনেক ইতিহাস জড়িত রয়েছে। তাই কলকাতা ঘুরতে আসলে বিখ্যাত এই স্থানটিতে একবার ঘুরে আসতে পারেন।

১০. ইকো পার্ক এবং নিকো পার্ক

বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য গুলোর রেপ্লিকা তৈরি করে ইকোপার্ক বেশ আগেই দুনিয়ার নজরে এসেছিল। এছাড়া ইকোপার্কের মনমুগ্ধকর পরিবেশ আপনাকে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি দিবে যা হয়তো আপনি কখনোই ভুলতে পারবেন না।

অন্যদিকে সল্টলেক এ অবস্থিত সবচেয়ে পছন্দনীয় এই নিকো পার্ক অর্জন করেছে সর্বসেরা পার্ক গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পার্কের খেতাব। যেখানে আপনি বর্তমান যুগ এর বেশ কিছু মর্ডান রাইড এ উঠতে পারবেন। পাশাপাশি আপনি ওয়াটার ওয়ার্ল্ড এর মজাটাও নিয়ে নিতে পারেন। বেশ অনায়াসেই আপনার গোটা একটি দিন পার করে দিতে পারেন কলকাতার এই দর্শনীয় পার্কে ঘুরতে এসে।

১১. মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মিউজিয়াম টি সবার নজর কেড়েছে শুরুতেই। কারণ এখানে বিখ্যাত ব্যক্তিগণের ৫০ টিরও বেশি মোমের মুর্তি রয়েছে। যা দেখতে অনেকটাই সত্যিকারের মনে হয়। 

১২. ট্রাম এবং মেট্রো

কলকাতায় আসবেন অথচ আপনি ট্রামে উঠবেন না তা কি করে হয়? ট্রামের শহরে এসে আপনি ট্রামে চেপে যখন আপনার গন্তব্যে পৌঁছাবেন তখন আপনার চোখের সামনে পুরো কলকাতা শহর ভেসে উঠবে এবং ট্রামে চলে যেতে যেতে আপনি কলকাতা শহরের বেশ ক্লাসিক একটি ফিল পাবেন।

তাই কলকাতায় গেলে ট্রামে অবশ্যই উঠবেন এবং ট্রামের যাবতীয় ইতিহাস ঘুরে দেখার জন্য ট্রাম মিউজিয়ামেও একটু ঘুরে আসতে পারেন।

ট্রামের ঠিক বিপরীত জিনিসটি হচ্ছে মেট্রো। মেট্রোকে আমাদের ডিজিটাল যুগের ট্রাম বলা যেতে পারে। খুব দ্রুত গতিতে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পৌঁছানোর জন্য মেট্রো নামক জিনিসটির উদ্ভাবন। আজকাল কলকাতার মেট্রো ও অনেক সুনাম কামিয়ে নিচ্ছে, মেট্রো তে চেপে মাটির নিচ দিয়ে দ্রুত গতিতে গিয়ে একদিন ঘুরেই আসুন না এসপ্ল্যানেড থেকে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির।

ঢাকা থেকে কলকাতায় কিভাবে যাবেন?

বর্তমান যুগের প্রযুক্তি’র কল্যাণে এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায় যাওয়া-আসাটা বেশ সহজসাধ্যই বলা চলে। যেহেতু কাঁটাতার বিভক্ত করেছে দুই বাংলাকে সেহেতু কিছু নিয়ম কানুনের মেনেই ঢাকা থেকে কলকাতায় যেতে হয়। নিয়ম-কানুন কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়, শুধুমাত্র ভ্যালিড পাসপোর্ট এবং ভ্যালিড ইন্ডিয়ান ভিসা থাকলেই আপনি বেশ সহজে আপনার পছন্দের পথ অথবা রুট দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে।

বাই এয়ার / বিমান পথ

কলকাতাতে ব্যবসায়িক কাজে অথবা মিটিংয়ে, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য ইমার্জেন্সি রোগীগণ অথবা যারা একটু দ্রুত সময় যেতে পছন্দ করে তারা বিমান পথটি বেশিরভাগ সময়ে ব্যবহার করে থাকে।
বিমানের জানালা দিয়ে দৃশ্য উপভোগ করতে করতে কখন যে কলকাতা চলে আসবেন তা টেরও পাবেন না। বিমান পথে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যেই ঢাকা থেকে কলকাতায় পৌঁছে যাবেন।


যাইহোক বিমান পথে যেহেতু সবচেয়ে দ্রুত সময় যাওয়া যায় সেহেতু যাতায়াত খরচটা একটু বেশি হবেই। সাধারণত, ৪০০০ অথবা ৫০০০ থেকে শুরু করে বিমান ভাড়া ৮০০০ থেকে ৯০০০ পর্যন্তও হতে পারে, সেটা ডিপেন্ড করে পরিস্থিতি ও সিটের ধরণ অনুযায়ী। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের প্রাইজ বিভিন্ন রকম হয়।
কিন্তু আপনি যদি রিটার্ন টিকেট সহ টিকেট বুক করেন সে ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই প্রাইস কম পাবেন, আপনার অনেক সময় বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রকমের ডিসকাউন্টও অফার করে থাকে এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো। ঘরে বসেই আপনি আপনার পছন্দের বিমানের টিকিট কেটে নিতে পারেন বেশ সহজেই।

বাই রোড / স্থল পথ (বাস)

বাংলাদেশের পুরোটা জুড়েই রয়েছে ইন্ডিয়ান বর্ডার। এর মধ্যে সবচেয়ে কাছের যে বর্ডার টা কলকাতার সাথে সেটি হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল বর্ডার। তাই এই বর্ডারটি সবার পছন্দের শীর্ষে রয়েছে যার কারণে কিছুদিন পরপরই মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ও লক্ষ্য করা যায়। বাই রোডে কলকাতা যাওয়ার জন্য বেশিরভাগ যাত্রী বাস কেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
সোহাগ, শ্যামলী, দেশ ট্রাভেলস, ঈগল পরিবহন ইত্যাদি বিভিন্ন কোম্পানির বাস ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। অনেকে যাত্রার জন্য রাতের সময় টিকে বেছে নেয় আবার অনেকে দিনের সময় টিকে। তবে বেশিরভাগ যাত্রী রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েই ভোরে বেনাপোল বর্ডারে পৌঁছে যায়। এরপর সকাল অথবা দুপুরের মধ্যে ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করে কলকাতা পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল, সন্ধ্যা আবার রাতও হয়ে যায় অনেক সময়, সেটা ইমিগ্রেশনে কতক্ষণ সময় লাগছে সেটির উপর নির্ভর করবে।
ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার ডিরেক্ট বাস সার্ভিসও চালু হয়েছে এবং সেটি হচ্ছে সৌহার্দ্য পরিবহন। এক্ষেত্রে টিকিটের মূল্য দুই হাজার থেকে শুরু করে তিন হাজার পর্যন্ত হতে পারে, যেটাতে ট্রাভেল ট্যাক্স ইনক্লুড থাকবে।

বাই রোড / স্থল পথ (ট্রেন)

যারা ঝামেলা একটু কম চায় আবার যাতায়াত খরচ টা প্লেনের থেকে কম আশা করে থাকে তারা সব সময় ট্রেন দিয়েই যাতায়াত করে থাকেন। ট্রেনে বসে আপনি একবারে ডিরেক্ট ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে পারবেন। বাই ট্রেন অথবা ট্রেন পথে ঢাকা থেকে কলকাতা ডিরেক্ট যাওয়া যায় বলেই অনেকেই এই পথ টি বেছে নেয়।


তবে আপনি যদি ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান সেক্ষেত্রে সে ভিসাতে অবশ্যই ট্রেন এর রুট উল্লেখ থাকতে হবে, যা ভিসা আবেদন করার সময়তেই আপনার পোর্টটি উল্লেখ করে দিতে হবে। ঢাকা থেকে কলকাতা ডিরেক্ট যাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই “বাই রেল গেদে” এই পোর্ট টি ভিসা আবেদন করার সময় উল্লেখ করতে হবে।
মূলত ভারত এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে “মৈত্রী এক্সপ্রেস” নামক এই ট্রেনটি গেদে-দর্শনা বর্ডার হয়ে যাতায়াত করে থাকে দুই বাংলায়। সপ্তাহে চার দিন এই ট্রেন টি আসা যাওয়া করে থাকে। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটা থেকে আটটা নাগাদ ছেড়ে যায় কলকাতার উদ্দেশ্যে এবং সেখানে গিয়ে কলকাতার চিৎপুর স্টেশনে ট্রেনটি থামে বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মাঝে। 


ক্ষেত্র বিশেষে এই টাইমিং তে পরিবর্তন হতে পারে। এরকম করেই চিতপুর থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ট্রেনটি পৌঁছে থাকে, কিন্তু দিনগুলো ভিন্ন হয়। ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার সময় এই ট্রেনটির চলাচল এর দিনগুলো হচ্ছে শনিবার, রবিবার, বুধবার এবং শুক্রবার। অন্যদিকে কলকাতা থেকে ঢাকা ফিরে আসার সময় এই ট্রেনটির চলাচলা এর দিনগুলো হচ্ছে শনিবার, সোমবার, মঙ্গলবার এবং শুক্রবার।
এসি সিট এবং এসি চেয়ার অথবা এসি ক্যাবিন এর উপর ভিত্তি করে ট্রেন টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। প্রাপ্ত এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক মিলে এই মূল্যটি নির্ধারণ করা থাকে ৯০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে এই ট্রেনের টিকেট কাটতে পারবেন এবং এই ট্রেনের টিকেট কাটতে অবশ্যই আপনাকে আপনার পাসপোর্ট টি সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি রিটার্ন টিকেট সহ টিকেট কাটতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ভিসাও দেখাতে হবে। এছাড়া বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস নামেও দু’টি ট্রেন রয়েছে যেটি ঢাকার বাইরে থেকে ছাড়ে।

সি রুট / নৌ পথ

বর্তমান সময়ে ঢাকা থেকে কলকাতা নৌ পথেও যেতে পারবেন। এম ভি মধুমতি নামক জাহাজটি আপনাকে ঢাকা থেকে কলকাতায় পৌঁছে দেবে। এক্ষেত্রেও ডেক, সিট অথবা কেবিন ভেদে ভাড়া পৃথক হয়ে থাকে। ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫,০০০ পর্যন্ত ভাড়া হয়ে থাকে।

কলকাতায় গিয়ে কোথায় থাকবেন?

বেশিরভাগ ভ্রমনপিপাসুরা কলকাতার ধর্মতলা-নিউমার্কেট এরিয়াতে উঠে থাকেন। শোনা যায় কলকাতার নিউমার্কেট এরিয়া যেন বাংলাদেশীদের দখলে। কারন, আপনি যখন ঘুরতে যাবেন তখন প্রতিটি কদমে কদমে আপনি একজন হলেও বাংলাদেশী পেয়ে যাবেন।

নিউমার্কেট এরিয়া থেকে কলকাতার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহ বেশ কাছেই পড়ে তাই থাকার জন্য পর্যটকদের এই স্থানটি পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপরে ভিত্তি করে মূলত ৫০০ থেকে শুরু করে ১৫ হাজার পর্যন্ত রুম এর ভাড়া হয়ে থাকে।
আপনি যদি ফাইভ স্টার হোটেলে থাকতে চান, সেটিও পারবেন এবং আপনি যদি কোন লোকাল হোটেলেও উঠতে চান সিঙ্গেল রুমের, সেটিও পারবেন। দামি-কমদামি মিলিয়ে দুই থেকে তিন হাজারের মতো হোটেল রয়েছে কলকাতার নিউমার্কেট এরিয়ার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। 
কিন্তু থাকার জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যেই লেইন অথবা এলাকাগুলো বিখ্যাত সেগুলো হচ্ছে –

  1. মার্কুইস স্ট্রিট
  2. মির্জা গালিব স্ট্রিট
  3. পার্ক স্ট্রিট
  4. রয়েড স্ট্রিট
  5. কলিন স্ট্রিট
  6. মিডেলটোন স্ট্রিট
  7. নিউ টাউন

আশা করি, কলকাতার দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে একটি জানতে পেরেছেন। সেইসাথে কলকাতা ঘুরতে যাওয়ার পথ, খরচ এবং কোথায় থাকবেন সেসম্পর্কেও আইডিয়া দিতে পেরেছি। আপনার কলকাতা ভ্রমণ সুন্দর হোক সেই কামনা করছি। 

বাংলাদেশ থেকে ভারত গেলে একটু সতর্ক ভাবে যাবেন এবং থাকবেন। কারো সাথে রাজনৈতিক আলোচনা করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন।

বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে কলকাতা কিংবা ভারতের অন্যান্য স্থানে ভ্রমণ করতে/ চিকিৎসার জন্য যেতে চান তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনার টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং সহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে দিবো।

আমাদের পেজঃ GooFly24.com

আমাদের এপঃ

গ্রুপঃ Bangladesh Tourist Squad

Scroll to Top