উমরাহ্‌ হজ্ব কিভাবে করবেন? ভিসা, পাসপোর্ট এবং বিমান ভ্রমণ সম্পর্কে জেনে নিন

কে না চায় মক্কা ও মদিনা সফর করতে? নবি (ﷺ)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত এবং আল্লাহর ঘর কাবা তাওয়াফ করতে? মুসলিম ও মুমিন মাত্রই এই স্বপ্ন বুকে লালন করেন এবং আমৃত্য এই আশা নিয়েই বেঁচে থাকেন। যখন আসমান থেকে ডাক আসে, তখনই তাঁদের সেই স্বপ্নের ময়ূর বাস্তবে পেখম মেলে। তিনি পাড়ি জমান দূর মদিনায়, সোনার মদিনায়। 

পাড়ি জমান নবিজির জন্ম-শহর মক্কায়। আমাদের দেশের মানুষ মক্কা ও মদিনায় সফর করেন, মূলত হজ ও উমরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু যারা নতুন তারা জানেন না কীভাবে উমরা হজ এর জন্য বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার উপায় কি, কত টাকা প্রয়োজন হয়, কী করতে হয়। আজকের প্রবন্ধে আমরা বাংলাদেশ থেকে উমরা করতে যাওয়ার সকল নিয়ম-কানুন জানবো ইনশাআল্লাহ। 

আমরা এই প্রবন্ধটি থেকে যা যা জানতে পারবো তা একনজরে দেখে নেওয়া যাক-

  1. বাংলাদেশ থেকে উমরা করতে যাওয়ার জন্য কী কী দরকার;
  2. পাসপোর্ট করার আদ্যোপান্ত;
  3. ভিসা ম্যানেজ করার কায়দা-কানুন;
  4. উমরার প্যাকেজসমূহ ও খরচের বিবরণ;
  5. উমরার জন্য যে যে জিনিসপত্র সাথে নেয়া জরুরি;
  6. এয়ারপোর্টের কী কী করা লাগে;
  7. বিমান ভ্রমণে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়;
  8. সৌদিতে গিয়ে কী খাবেন, কোথায় থাকবেন:
  9. নিরাপত্তার জন্য যে সকল সতর্কতা অবলম্বন করবেন

ইত্যাদি বিষয়ে খুঁটিনাটি সব তথ্য। আশা করি, বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটি আপনার ভালো লাগবে এবং এ থেকে অনেক উপকৃতও হবেন ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশ থেকে উমরা করতে যাওয়ার জন্য কী কী দরকার:
প্রথমেই আসি, উমরা পালন করতে কী কী লাগবে সেই বিষয়ে। উমরা পালন করতে হলে
প্রথমত, আপনার টাকা লাগবে।
একটি বৈধ পাসপোর্ট লাগবে। এবং সর্বশেষ সৌদির ভিসা।

এখন প্রশ্ন হলো ভিসা / পাসপোর্ট কীভাবে সংগ্রহ করবেন?

আমরা ধরে নিচ্ছি উমরা করার মতো আপনার প্রয়োজনীয় টাকা আছে। তাই বিষয়টি আপাতত পিছনে রাখছি। তাহলে বাকি থাকে, পাসপোর্ট এবং ভিসা। যদি আপনার আগে থেকেই একটি পাসপোর্ট থাকে, তাহলে আপনি অনেকাংশেই ঝামেলা মুক্ত। আর যদি না থাকে, তাহলে অবশ্যই আগে একটি পাসপোর্ট তৈরি করতে হবে। 

এখন আবারও প্রশ্ন করতে পারেন, কীভাবে পাসপোর্ট বানাবেন এবং এতে কী পরিমাণ খরচ লাগতে পারে? আগে পাসপোর্ট করতে দালাল ধরতে হতো, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারেন। যদি মনে করেন, এসব ঝামেলা, আমার দ্বারা হবে না, তাহলে নিকটস্থ দক্ষ কোনো কম্পিউটারের দোকানে যান।

কিভাবে পাসপোর্ট করবেন

আপনি যেহেতু ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন, সেজন্য আপনার কাছে কিছু ডকুমেন্ট থাকা লাগবে। ই-পাসপোর্টের জন্য যা যা থাকা দরকার নিচে তা আলোচনা করা হলো-

টাকা ছাড়াও (ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিধি অনুসারে) ই-পাসপোর্ট করতে মূলত প্রয়োজন হয়-
জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্ম-নিবন্ধন সনদ।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক (অর্থাৎ যাদের বয়স আঠারো বছরের কম) আবেদনকারী- যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নাই, তারা বাবা অথবা মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর উল্লেখ করা আবশ্যক।
জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (ইংলিশ ভার্সন) নিম্নোক্ত বয়স অনুসারে দাখিল করতে হবে-

(ক) আটারো (১৮) বছরের নিচে হলে অনলাইন জন্ম-নিবন্ধন সনদ (ইংলিশ ভার্সন)

(খ) আঠারো থেকে (১৮-২০) বছর হলে জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (ইংলিশ ভার্সন) দুটোর একটা।

(গ) বিশ (২০) বছরের উপরে হলে জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID) আবশ্যক ।

ছয় বছর বয়সের নিচের আবেদনের ক্ষেত্রে 3R Size সাইজের ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি আবশ্যক।
অনলাইন আবেদনপত্রটি বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ঠ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস অথবা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দাখিল করতে হবে।

১৮ বছরের নিচের এবং ৬৫ বছরের ‍উপরের সকল আবেদনে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার।
প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদসমূহ প্রয়োজন হবে। যেমন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি আপলোড বা সংযোজন করতে হবে।

প্রাসঙ্গিক জিও (GO) অথবা এনওসি (NOC) অথবা প্রত্যয়নপত্র অথবা অবসরোত্তর ছুটির আদেশ (PRL Order) অথবা পেনশন বই আপলোড বা সংযোজন করতে হবে যা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের নিজ নিজ Website এ আপলোড থাকতে হবে। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
বিবাহ সনদ/নিকাহনামা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
নাগরিক সনদ/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

উমরাহ্‌

ই পাসপোর্ট ফি:

পাতার সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ই-পাসপোর্ট ২ ধরনের হয়ে থাকে।
৪৮ পাতার (48 Pages)
৬৪ পাতার (64 Pages)
আবার মেয়াদের উপর ভিত্তি করে ২ প্রকার।
৫ বছর মেয়াদী
১০ বছর মেয়াদী
এখন আপনি কোনটি চান এবং কত তাড়াতাড়ি পেতে চান তার উপর নির্ভর করবে টাকার পরিমাণটা। সহজে বোঝার জন্য নিচের টেবিলটি লক্ষ করুন।

সরকারি চাকুরিজীবিদের মাঝে যাদের এনওসি (NOC) আছে বা অবসর-সনদ আছে, তারা রেগুলার ফি দিয়ে জরুরি সুবিধা পাবেন। সরকারি চাকুরিজীবিদের ক্ষেত্রে জরুরি আবেদন প্রযোজ্য নয়।

ওমরা বা সৌদি ভিসা ম্যানেজ করার উপায়:

পাসপোর্ট করা হয়ে গেলে আপনাকে ওমরায় যেতে সৌদির ভিসা ম্যানেজ করতে হবে। উমরা ভিসা সাধারণত ১৪ দিন, ২১ দিন, ৩০ দিন ও ৪৫ দিনের জন্য ইস্যু করা হয়। এজন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য হজ্জ এজেন্সির দারস্থ হওয়া। হজ্জ এজেন্সিগুলো সাধারণ প্যাকেজ সিস্টেমে উমরা করাতে নিয়ে যায়।

সময় ও সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্যাকেজ আছে। যেমন-

  • ইতিকাফকালীন উমরা প্যাকেজ;
  • ঈদুল ফিতর পরবর্তী উমরা প্যাকেজ;
  • অফিস-সহযোগী (কলিগ) কিংবা পরবারের সদস্যদের নিয়ে দলবদ্ধ উমরা;
  • ছাত্রদের জন্য উমরা;
  • বিবাহিত দম্পতিদের জন্য উমরা প্যাকেজ; এবং
  • ফ্যামিলি উমরা প্যাকেজ।

এজেন্সির সাথে কথা বলে নিশ্চিত হবেন আপনি কোন প্যাকেজে যেতে চান। সেই প্যাকেজে কী কী ধরণের সুযোগ-সুবিধা আছে। আরো জানবেন ভিসা প্রসেস এর জন্য কী কী লাগে। আপনি যদি পুরুষ হোন এবং একাই উমরা করতে চান, তবে এজেন্সির কাছে আপনার পাসপোর্ট দিলেই হচ্ছে। বাকি কাজ তারাই করে দিবে। তাড়াছাও অনেক এজেন্সি নিন্মলিখিত কাজপত্র চায়।

পাসপোর্ট (ন্যূনতম ৬মাস মেয়াদ আছে এমন বৈধ পাসপোর্ট ও কমপক্ষে খালি ৪ পৃষ্ঠা)
দুই কপি সাম্প্রতিক তোলা ছবি;
মূল (অরিজিনাল) স্মার্ট / এনআইডি কার্ড;
শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ;
স্বামী-স্ত্রী একসাথে যেতে চাইলে তাদের বিবাহ সার্টিফিকেট;
প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই মাহরাম ও আইনত অভিভাবকের থেকে স্বীকৃতিপত্র তথা (লেটার অব অথোরাইজেশন) সাথে নিতে হবে।
ভিসা নিশ্চিত হয়ে গেলে এবার প্রয়োজন আপনার নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করা।
উমরার জন্য যে যে জিনিসপত্র সাথে নিবেন:

প্রথমত, একটি হাত ব্যাগ, একটি কাঁধ ব্যাগ এবং একটি ল্যাগেজ প্রয়োজন। স্মরণ রাখবেন, কাঁধ ব্যাগে করে পানির বোতল নেয়া যায় না।
প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়।
দরকারি ওষুধপত্র। তবে ঘুমের ওষুধ নিতে হলে প্র্রেসক্রিপশন দেখাতে হবে।
শুকনো খাবার।
টুথপেস্ট, ব্রাশ, তেল, টিস্যু।
প্রয়োজনীয় টাকা ইত্যাদি।

২০২৫ সালে উমরা করতে সম্ভাব্য খরচ:

(নিম্নের তথ্য গুলো গতবছরের। এই বছরের আপডেট তথ্য জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন)

খরচের বিষয়টা আসলে সুনির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল। বিভিন্ন হজ এজেন্সি সুযোগ-সুবিধার তারতম্যের ভিত্তিতে টাকার পরিমাণটা নির্ধারণ করেন। বিভিন্ন প্যাকেজের খরচ তালিকা প্রকাশ। নিচে সেটা দেয়া হলো। বলে রাখা ভালো  এজেন্সি ভেদে এবং সুযোগ সুবিধা ভেদে টাকার পরিমান কম বেশি হয়ে থাকে।

আমাদের GooFly24.com থেকে ১লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু আরো বেশি টাকার বিভিন্ন প্যাকেজ পেতে পারেন। বিস্তারিত জানতে আমাদের পেজে এসএমএস দিন।

ইতিকাফকালীন উমরা প্যাকেজ
১২-১৪ দিন
১,৪০,০০০ টাকা

ঈদুল ফিতর পরবর্তী উমরা প্যাকেজ
১৪ দিন
১,৪০,০০০ থেকে শুরু

অফিস-সহযোগী (কলিগ) কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দলবদ্ধ উমরা
১৪ দিন
১,৪০,০০০ থেকে শুরু

ছাত্রদের জন্য উমরা
১৪ দিন
১,০০,০০০ টাকা থেকে শুরু

স্বামী-স্ত্রী (দম্পতী) জন্য উমরা প্যাকেজ
আলোচনা সাপেক্ষে

ফ্যামিলি উমরা প্যাকেজ।
আলোচনা সাপেক্ষে

এয়ারপোর্টের-নিয়ম কানুন

এয়ারপোর্টে ইমিগগ্রেশন পুলিশ আপনাকে এবং আপনার জিনিসপত্র তল্লাশি করবে। দেখবে আপনার কাছে অবৈধ কিছু আছে না। তারা আপনার পাসপোর্ট চেক করবে। সবকিছু যখন ‘ওকে’ দেখবে অর্থাৎ আপনার নিকট অবৈধ ও আপত্তিকর কিছু নেই, তখন আপনাকে ভিতরে ঢুকার অনুমতি দিবে। আপনি তখন যথাসময়ে বিমানে উঠবেন এবং স্বপের দেশে যাওয়ার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবেন।

বিমান ভ্রমন

বিমানে ওঠার পর করণীয়

  • বিমানে আপনি সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
  • অপরিচিত লোকের দেয়া কিছু খাবেন না।
  • আপনার জিনিসপত্র নিজ দায়িত্বে রাখবেন।
  • বিমানে বাথরুমের প্রয়োজন হলে ব্যবহার করবেন।
  • সর্বদা পরিচ্ছন্ন বজায় রাখবেন।
  • কিছু খেতে চাইলেও খেতে পারেন।
  • কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে বিমানবালাকে অবগত করতে পারেন।

সৌদিতে কোথায় থাকবেন, কী খাবেন?

একটি নতুন দেশে আসতে পেরে প্রথমেই আনন্দের শিহরণে আপনি উদ্বেলিত হবেন। নতুন নতুন সবার বেলায় তা-ই হয়। সে যাই হোক, সৌদি এয়ারপোর্ট থেকে নির্দিষ্ট সময়ে এজেন্সির গাড়ি এসে আপনাকে তাদের হোটেলে নিয়ে যাবে। সেখানে সময়মত খাবার দাবার দিবে। সাধারণত এজেন্সিগুলো তিন বেলাই খাবার সরবরাহ করে। কোন বেলায় কোন কোন খাবার থাকছে তা এজেন্সি থেকে জেনে নিবেন। সুতরাং এজেন্সির সাথে প্যাকেজ আকারে গেলে থাকার খাওয়ার কোনো টেনশনই করতে হচ্ছে না। তবে আপনি যদি একা যান, তবে আপনাকে সবকিছু নিজ দায়িত্বেই করতে হবে।

সৌদিতে থাকা ও খাওয়ার খরচ:

প্রকৃতপক্ষে থাকা ও খাওয়ার খরচ নির্ভর করবে আপনি কেমন হোটেলে থাকবেন তার উপর। সেখানে মূলত তিন ধরনের হোটেল পাওয়া যায়।
তুলনামূলক কম মানসম্পন্ন। এখানে থাকার খরচ সবচে’ কম।
মধ্যম সারির হোটেল। এখানে থাকার খরচ মধ্যম পর্যায়ের।
উন্নত মানের হোটেল। এখানে থাকার খরচ সবচে’ বেশি।

কম মানসম্মত হোটেলগুলোতে একটা রুমে যদি ৪ বা ৫ জন লোক থাকে, তবে জনপ্রতি ২০/৩০ রিয়াল হলেই চলবে।
সিঙ্গেল রুমের ক্ষেত্রে, যেগুলো হেরেম থেকে একটু দূরে সেগুলোর মূল্য ১২০ থেকে ১৫০ রিয়াল। ২০০ থেকে ২৫০ হলে আপনি মোটামুটি ভালোর মাঝে রুম পাবেন।
আর যদি একদম ভিআইপি রুম চান তাহলে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ‍৪০০ রিয়ালের মতো।

বাংলাদেশি টাকার মান যেহেতু ওঠানামা করে সেহেতু সিজনভেদে টাকার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। সুতরাং আপনার সক্ষমতা কেমন সেই অনুসারে রুম বুকিং নিবেন।

খাবার-দাবারের বিষয়টাও নির্ভর করে আপন কেমন খাবার গ্রহণ করবেন তার উপর। তবে মোটামুটি ৩০ থেকে ৪০ রিয়াল হলে আপনি এক দিনের খাবার খরচ হয়ে যাবে। প্রশ্ন করতে পারেন বাংলাদেশি টাকায় কত? চলুন হিসেবেটা এখনই কষে নিই।

বর্তমানে সৌদির ১ রিয়াল = ২৮.২১ টাকা।
সুতরাং, ৩০ রিয়াল = (২৮.২১ ৩০); =৮৪৬.৪৩ টাকা বা প্রায় ৮৪৭ টাকা। ৪০ রিয়াল = (২৮.২১ ৪০); = ১১২৮.৫৮ বা প্রায় ১১২৯ টাকা। অতঃএব আপনার কাছে যদি ৮৪৭ থেকে ১১২৯ টাকা থাকে তাহলে একদিনের খাওয়ার খরচ চলে যাবে।

এখন আপনি যদি ১৫ দিন থাকেন তাহলে খাবার খরচ বাবদ আপনার দরকার হবে (৮৪৭ ১৫) = ১২,৭০৫ টাকা থেকে (১১২৯ ১৫) = ১৬,৯৩৫ টাকা।
এভাবে আপনি যতদিন থাকবেন, ততদিনের খাবার খরচের হিসেব বের করতে পারবেন।

সৌদিতে হোটেল কীভাবে বুকিং নিবেন:

উমরায় যেয়ে থাকার জন্য দুইভাবে হোটেল বুকিং নেয়া যায়।

  1. সরাসরি সৌদিতে গিয়ে।
  2. অনলাইনে।

আপনি সরাসরি সৌদিতে গিয়ে হোটেল বুকিং নিতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে নতুন হলে অবশ্য একটু বেগ পেতে হতে পারে। আপনাকে যোগাযোগ করার জন্য আরবি অথবা ইংরেজি দুটোর যেকোনা একটি ভাষা জানা থাকা লাগবে।

অনলাইনে হোটলে বুকিং করার জন্য বিভিন্ন ওয়েব সাইট আছে। বুকিং.কম সেগুলোর একটি। তবে হাঁ, অনলাইনে প্রতারিত হওয়ার অনেক আশঙ্কা থাকে। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন মানুষের পরামর্শে বুকিং করাই শ্রেয়।

নিজের নিরাপত্তা বজায় রাখতে করণীয়

মক্কা ও মদিনা যদিও পূণ্যময় স্থান, তা সত্ত্বেও প্রতারক মানুষের উপস্থিতি যে সেখানে নেই এমনটা ভাবা ভুল। মূলত বিভিন্ন দেশের নিচু মন-মানসিকতার লোকও সেখানে পাওয়া যায়। তাদের ধান্দাই মানুষের ক্ষতি করা। তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে এবং সুযোগ পেলেই মানুষের ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাই-

  • সর্ব ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
  • টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন নিরাপদ রাখুন।
  • অপরিচিত লোকের দেয়া কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • এক একা দূরে কোথাও যাবেন না।
  • কখনো যদি মানুষের ভীড়ে যদি হারিয়ে যান, পুলিশের সহায়তা নিন।
  • যে রুমে উঠবেন, সেখানে দরজা খোলে কোথায় যাবেন না।
  • অপরিচিত মানুষের সাথে অযথা কথা বলবেন না।

আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, সাধারণত ২ থেকে ৩ দিনেই আপনি উমরা পালন সম্পন্ন করতে পারবেন। বাকিদিনগুলো আপনার ইচ্ছামত থাকার সুযোগ রয়েছে। তবে হজ্জ এজেন্সিগুলো কিছু ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের জন্য নিয়ে যায়। যেমন, বদরের প্রান্তর, উহুদের প্রান্তর… ইত্যাদি।

আপনার যদি উমরা করার পাশাপাশি এসব স্মৃতিময় স্থান ভ্রমণ করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে এজেন্সি থেকে সিট বুকিংরের আগেই জেনে নিবেন তারা কোন কোন জায়গায় আপনাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে। তা নাহলে আপনার আকাঙ্ক্ষিত জায়গায় আপনি ভ্রমণ করতে পারবেন না।

হজ এজেন্সি নির্বাচনে বিশেষ সতর্কতা

এবিষয়ে আলাদা করে লেখার প্রয়োজন হলো। কেননা, অনেক হজ এজেন্সি নির্দিষ্ট একটি টাকায় আপনার উমরা পালন সম্পন্নের কথা বলে নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে নানা অজুহাতে আপনার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা দাবি করবে। 

এতে আপনার মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। পবিত্র একটা জায়গায় যাওয়ার পর যখন এজেন্সির লোকদের কথার সাথে কাজের কোনো মিল না পাবেন, তখন সঙ্গত কারণেই আপনার মন-মেজাজ খারাপ হবে এবং খারাপ থাকবে। সুতরাং পরিচিত, বিশ্বস্ত এবং তাকওয়াবান লোকদের দ্বারা পরিচালিত হজ এজেন্সি নির্বাচন করুন।

পরিশেষে আপনার উমরা পালন যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়, সেই দুআ করি। আর এই আর্টিকেল পড়ে যদি কোনো উপকার পেয়ে থাকেন, তাহলে কাবার গিলাবে ধরে যখন দুআ করবেন, তখন মেহেরবানি করে আপনার এই অধম ভাইটিকেও স্মরণ করবেন। সবর্দা সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ফি-আমানিল্লাহ।

Scroll to Top