উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত তথা ইংল্যান্ডে পড়তে যেতে চায় না এমন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা নগণ্য। কিন্তু দেশে পড়াশোনা যতটা ব্যয়সাপেক্ষ, ইংল্যান্ডে যে তার থেকে বেশি হবে তা বলাই বাহুল্য। এজন্য দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার আগে সবাই সংশ্লিষ্ট দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আকর্ষণীয় ধরনের কিছু স্কলারশিপ খুঁজে থাকে।
আপনার সেসব তথ্যের যোগান দিতেই আমরা আজকে হাজির হয়েছি ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ তালিকা, স্কলারশিপ পাওয়ার শর্ত বা যোগ্যতা, কি কি স্কলারশিপ অ্যাভেইলেবল ইত্যাদিই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়।
ইংল্যান্ডের পড়াশোনার সার্বিক পরিস্থিতি
ইংল্যান্ড ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর কাতারে পড়ে। সেখানকার পড়াশোনার সার্বিক মান খুবই ভালো। পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে দেখা যাবে টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাংকিং এ বরাবরই টপ টেনে ইংল্যান্ডের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অনায়াসেই জায়গা করে নেয়।
এছাড়া, আরেকটি চমৎকার দিক হলো, সেখানের পড়াশোনাটা শুধুমাত্র পড়লাম আর ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে এলাম ধরনের না। বরং, ইংল্যান্ড প্রায়োগিক শিক্ষা প্রদান করে থাকে। এখানে, আপনি যতটুকু শিখবেন, তা এমনভাবে শিখতে হবে যেনো আপনি সেই শিক্ষাটা নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তারা তাদের কারিকুলাম বা শিক্ষানীতি প্রয়োগ করে থাকে।
বাস্তবতার নিরিখে করা এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাই মূলত ইংল্যান্ডের পড়াশোনাকে বিশ্বমানের করেছে। স্কলারশিপ নিয়ে আলোচনার পূর্বে এক নজরে দেখে নিন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ১০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা:
- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়:
বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক র্যাকিং এ প্রথম অবস্থানে আছে। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা: https://www.ox.ac.uk/
- ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়:
আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ ৬ এবং দেশীয় র্যাংকিং এ ২ এ অবস্থান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা: https://www.cam.ac.uk/
- লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজ:
আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ ১১ এবং দেশীয় র্যাংকিং এ ৩ এ অবস্থান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা:https://www.imperial.ac.uk/
- ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন:
আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ ১৬ এবং দেশীয় র্যাংকিং এ ৪ এ অবস্থান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা: https://www.ucl.ac.uk/
- লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস এন্ড পলিটিকাল সাইন্স:
আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ ২৭ এবং দেশীয় র্যাংকিং এ ৫ এ অবস্থান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা:https://www.lse.ac.uk/
- কিংস কলেজ, লন্ডন:
আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ ৩৫ এবং দেশীয় র্যাংকিং এ ৬ এ অবস্থান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা:https://www.kcl.ac.uk/
- ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়:
আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ ৫১ এবং দেশীয় র্যাংকিং এ ৭ এ অবস্থান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা:https://www.manchester.ac.uk/
- ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়:
আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ ৭৭ এবং দেশীয় র্যাংকিং এ ৮ এ অবস্থান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা:https://warwick.ac.uk/
- ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়:
আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ ৯৬ এবং দেশীয় র্যাংকিং এ ৯ এ অবস্থান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা:https://www.bristol.ac.uk/
- বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়:
আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ ১০৭ এবং দেশীয় র্যাংকিং এ ১০ এ অবস্থান করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট ঠিকানা:https://www.birmingham.ac.uk/index.aspx
ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় স্কলারশিপ তালিকা
ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় তিনটি স্কলারশিপ হলো:
- শেভেনিং স্কলারশিপ
- কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ।
- ক্যামব্রিজ গেটস স্কলারশিপ।
চলুন জেনে নেই এই স্কলারশিপ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাবলী:
১. শেভেনিং স্কলারশিপ
শেভেনিং স্কলারশিপ একটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রোগ্রাম যারা বিশ্বব্যাপী এই প্রোগ্রামের আওতায় প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে সুযোগ দিয়ে থাকে। এই স্কলারশিপ নিয়ে কেউ পড়তে গেলে সে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করার সুযোগ পাবে।
শেভেনিং স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষার্থীর টিউশন ফি, ভিসা আবেদনের খরচ, পড়া চলাকালীন নিজ দেশে যাতায়াত এবং পড়া শেষে পরিপূর্ণ ভাবে নিজ দেশে ফেরত আসা, মাসিক ভাতা, শেভেনিং ইভেন্ট সমুহে অংশ নেয়া ও ভ্রমণ সহ সব খরচ যুক্ত থাকে। এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার সময়সীমা প্রতিবছর ৬ নভেম্বর পর্যন্ত।
এই স্কলারশিপ পেতে হলে আবেদনকারীর যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন হবে তা হলো:
- অনার্সে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নম্বর।
- ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা।
- মাস্টার্স কোর্সে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য। অর্থাৎ, দেশের স্ব-স্ব শিক্ষা ব্যবস্থা অনুযায়ী তথ্য দিতে হবে। অনার্সের সার্টিফিকেট না থাকলে মাস্টার্সের জন্য আবেদন করা যাবে না। তবে, একবার মাস্টার্স করা থাকলে, দ্বিতীয় অন্য কোনো বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে।
- IELTS এ ন্যূনতম ৬.৫। এক্ষেত্রে IELTS পরীক্ষার প্রতি সেক্টরে ৫.৫ থাকতেই হবে।
তবে স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ছাত্র-ছাত্রীকে এই মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, সে পড়া শেষে অবশ্য অবশ্যই নিজ দেশে প্রত্যাগমন করবে। তবে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী যদি ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য সরকার অনূদিত কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে থাকে তাহলে এই স্কলারশিপের জন্য তার আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে ক্লিক করুন এই লিংকে: https://chevening.smartsimpleuk.com/s_Login.jsp
২. কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ
যুক্তরাজ্যের অন্যান্য স্কলারশিপের মধ্যে এই স্কলারশিপটি অত্যন্ত সম্মানজনক একটি স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপের আবেদন করার সময়সীমা প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্বয়ং ইউজিসি অথরিটি এই আবেদন গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে প্রেরণের ব্যবস্থা করে থাকে। কমনওয়েলথ স্কলারশিপের আওতায় সাধারণত ছয়টি বিষয়ে মাস্টার্সের আবেদন করা যায়। এগুলো হলো:
- সাইন্স এন্ড টেকনোলজি ফর ডেভেলপমেন্ট।
- স্ট্রেনথিং হেলথ সিস্টেমস এন্ড ক্যাপাসিটি।
- প্রমোটিং গ্লোবাল প্রোসপারিটি।
- স্ট্রেনথিং গ্লোবাল পিস, সিকিউরিটি এন্ড গভার্নেন্স।
- স্ট্রেনথিং রেসিলেন্স এন্ড রেসপন্স টু ক্রাইসিস।
- একসেস, ইনক্লুশন এন্ড অপরচুনেটিস।
এই স্কলারশিপের আবেদনের জন্য আপনাকে ইউজিসির লিংকে ক্লিক করতে হবে। লিংকটি: http://www.ugc.gov.bd/
৩. ক্যামব্রিজ গেটস স্কলারশিপ:
নামেই বুঝতে পারছেন এই স্কলারশিপ নিয়ে কেবল ক্যামব্রিজেই পড়া যাবে।
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং তার স্ত্রী মেলিন্ডার নামে করা ফাউন্ডেশন থেকে এই স্কলারশিপ দেয়া হয়। এই স্কলারশিপের আওতায় বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিষয়ে ডিপ্লোমা, মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে পারেন।
এগুলো ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আওতায় কিছু স্কলারশিপ পাওয়া যায়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট গুলোতে নজর রাখতে হবে।
বিলেতে কি কি স্কলারশিপ আছে তা তো জানা হলো। এবার চলুন জেনে নেই স্কলারশিপ এবং ভিসার আবেদন করার জন্য কি কি তথ্য বা ডকুমেন্টস লাগবে।
স্কলারশিপের আবেদন করার জন্য যা লাগবে:
- একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশিট
- IELTS সনদ।
- সিভি এবং রিকমেন্ডেশন
- বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র।
- পাসপোর্টের কপি।
ভিসার আবেদন করতে যা লাগবে:
- পাসপোর্ট ও ফটোগ্রাফ।
- সিভি, মোটিভেশন ও রেফারেন্স।
- সকল মার্কশিট ও সনদ।
- বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নো অবজেকশন সনদ।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার ও টিউশন ফি প্রদানের রশিদ।
- ব্যাংক ক্লিয়ারেন্স।
- পুলিশ ও হেলথ ক্লিয়ারেন্স।
- IELTS সনদের ফটোকপি।
- যে স্কলারশিপ নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রমাণপত্র।
তো, এইসব তথ্য জমা দিয়ে প্রায় তিন থেকে চার মাস অপেক্ষা করতে হয়। তাই, বেশ কিছুটা সময় রেখে আবেদন করাই ভালো। বিলেতে পড়াশোনায় খরচ একটু বেশিই। ন্যূনতম ৪০০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০০০ পাউন্ড লাগতে পারে। পড়ার বিষয় ভেদে এই খরচ উঠানামা করে।
আশা করা যায়, আমাদের আজকের আয়োজনে আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর গুলো খুঁজে পেয়েছেন। তো দেরি না করে ইংল্যান্ডে স্কলারশিপের আবেদন করে ফেলুন। আর স্বপ্ন পূরণে উড়াল দিন সুদূর বিলেতে।