আনন্দ পার্ক রিসোর্ট ভ্রমন গাইড

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার শফিপুরে সৌন্দর্যের এক অনন্য সমাহার নিয়ে বিদ্যমান আনন্দ পার্ক রিসোর্ট। এখানে ব্যক্তিগত ভাবে ঘুরতে যাওয়ার পাশাপাশি পিকনিক, কর্পোরেট অনুষ্ঠান কিংবা যে কোনো প্রোগ্রামের জন্য বুকিং দিতে পারবেন৷ প্রকৃতিক সৌন্দর্য ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ডেকোরেশনের সংমিশ্রণে এটি একটি চমৎকার বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে।

অবকাশ যাপনের জন্য পার্কের ভেতরে আছে চমৎকার ৬ টি কটেজ, সুইমিং পুল, বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন রাইডস, চমৎকার বাগান, কৃত্রিম ঝর্ণার ফোয়ারা সহ অনেক ছোট বড় ভাষ্কর্য। বৃহৎ এক বিলের পাশে পার্কটি অবস্থিত বলে এখানে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার-ও সুযোগ রয়েছে।

এছাড়াও আছে একটি থ্রিডি মুভি থিয়েটার। পার্কিং এর সুব্যবস্থা, কনফারেন্স হল, ফাস্টফুড ও গিফ্ট কর্ণার পার্কের সুযোগ সুবিধাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। তাই কর্মব্যস্ত জীবন থেকে নিজেকে এক দিনের জন্য ছুটি দিতে চাইলে চলে যেতে পারেন গাজীপুরের আনন্দ পার্ক রিসোর্টে।

আনন্দ পার্ক রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ:

সাধারণ ভাবে আপনি ৫০ টাকা প্রবেশমূল্য দিয়ে রিসোর্টে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে এই টিকেটে কোনো রাইডস বা সুইমিং পুল ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। সেজন্য আপনাকে আলাদা করে চার্জ প্রদান করতে হবে। আনন্দ পার্ক রিসোর্টে রাত্রিযাপন করতে চাইলে কিংবা পুরো একটা দিন রিসোর্টের লাক্সারিয়াস সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে চাইলে আপনাকে রিসোর্ট এর রুম ভাড়া নিয়ে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে রুম ভাড়া সাধারণত ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী রুম ভাড়ার তালিকা নিচে দেয়া হলো।

  • একটি নন এসি ইকোনমি রুমের ভাড়া পড়বে ৩০০০ টাকা।
  • এসি সিঙ্গেল রুম ৬০০০ টাকা।
  • সিঙ্গেল এসি ডিলাক্স রুম ৭০০০ টাকা।
  • ডবল এসি কটেজ রুম ১২০০০ টাকা।
  • একটি লিভিং রুম সহ ডবল বেড রুম ১৪০০০ টাকা।

এছাড়া ডরমিটরি স্টাইলে ১০০০ টাকায় একটি রুমের থাকার ব্যবস্থা করতে পারবেন৷
যে কোনো কর্পোরেট অনুষ্ঠানের জন্য কনফারেন্সে হল ভাড়া করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে এক দিনের জন্য ভাড়া পড়বে ৪০ হাজার টাকা। পিকনিক এর জন্য বুকিং দিতে চাইলে দুই ভাবে দিতে পারবেন।

একটু কম খরচে বুকিং দিতে চাইলে রিসোর্ট এর যে কোনো একটি পিকনিক স্পট বাছাই করতে পারবেন। একটি স্পট ভাড়া করলে খরচ পড়বে এক লক্ষ টাকা। আর পুরো রিসোর্ট বুকিং দিতে চাইলে ভাড়া পড়বে তিনলক্ষ টাকা। রুম ভাড়া নিলে কিংবা রিসোর্ট বুকিং করলে সেক্ষেত্রে সুইমিং পুল ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
তাহলে বলা যায় আনন্দ পার্ক ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনার খরচ নির্ভর করছে আপনার রুচির ওপর।

বি. দ্র: রুম ভারা ও বুকিং চার্জ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই ভ্রমণ প্লান করার আগে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে খরচের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিত।

যোগাযোগ:

  • ঠিকানা- তালতলী, সিনাবহ বাজার, শফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।
  • মোবাইল: ০১৭২৮-৫৪৩৩১৫ বা, ০১৭১২-৩১০৫৪০ বা, ০১৭৪৩-৮৩৮১২৩
  • ওয়েবসাইট- www.anandaresort.com.bd
  • ইমেইল- [email protected]

আনন্দ পার্ক রিসোর্ট যাওয়ার উপায়:

আনন্দ পার্ক রিসোর্ট যাওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে ঢাকার যে কোনো প্রন্ত থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা যেতে হবে। ঢাকা থেকে প্রতিনিয়ত বেশ কয়েকটি বাস গাজীপুরের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। এর মধ্যে আজমেরি গ্লোরি, গাজীপুর পরিবহন, বলাকা, প্রভাতী বনশ্রী উল্লেখযোগ্য। আপনি কোথা থেকে বাসে উঠছেন তার ওপরে ভিত্তি করে বাসভাড়া ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

গাজীপুর চৌরাস্তা নেমে পশ্চিম দিকে টাঙ্গাইল রোডে চলে যাবেন। এখান থেকে তাকওয়া নামক লোকাল বাসে করে যেতে পারবেন শফিপুর বাসস্ট্যান্ড। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। শফিপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে গেলেই পেয়ে যাবেন আনন্দ পার্ক রিসোর্ট।

সেক্ষেত্রে শফিপুর বাসস্ট্যান্ড নেমে সিএনজি পেয়ে যাবেন। এখান থেকে চাইলে সিএনজি রিজার্ভ করে সরাসরি চলে যেতে পারবেন আনন্দ পার্ক রিসোর্টের প্রবেশ গেইটে। রিজার্ভ গেলে ভাড়া লাগবে ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। আবার লোকাল সিএনজি করেও যেতে পারবেন। ড্রাইভারকে বললেই হবে হবে আপনি আনন্দ পার্ক রিসোর্টের সামনে নামবেন। লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩০ টাকা।

কোথায় খাবেন?

আপনি যদি ব্যক্তিগত ভাবে এক দিনের জন্য যেতে চান তাহলে ভেতরে একটি ফাস্টফুড এর দোকান আছে, সেখান থেকে খাওয়ার ঝামেলা শেষ করতে পারবেন। তাছাড়া একটি ফুচকা চটপটির দোকানও পাবেন।
পিকনিক গ্রুপ নিয়ে গেলে নিজেদের রান্না করে খেতে হবে।

রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রয়েছে। বাস রিজার্ভ করে গেলে রান্নার সরঞ্জাম ও বাবুর্চি সাথে নিয়ে নিতে পারবেন। অথবা রান্না করেও সাথে নিয়ে যেতে পারেন।

চাইলে “নিমন্ত্রণ ” পেইজে পিকনিক এর জন্য খাবার অর্ডার করতে পারবেন। গাজীপুরে যে কোনো জায়গায় তারা খাবার ডেলিভারি করে।
প্রয়োজনে যোগাযোগ: ০১৯২৭-৫৭৮৯২০

আনন্দ পার্ক রিসোর্ট ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

আনন্দ পার্ক রিসোর্ট একটি বিলের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। এখানে এসে মাছ ধরার পরিকল্পনা করে অনেকেই আসে। তাই বর্ষার সময় এখানে ঘুরতে আসার উপযুক্ত সময়। কেননা খড়ার মৌসুমে বিলে একদমই পানি থাকে না। ভরা বর্ষায় বিলের পানি পার্কের সাথে লাগোয়া ঘাট পর্যন্ত চলে আসে। তখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেই সাথে মাছ ধরার সুযোগও থাকে৷ তাই বর্ষার সময় ভ্রমণ প্লান করাটাই উপযুক্ত হবে।

আনন্দ পার্ক রিসোর্টে যা যা উপভোগ করবেন

একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আনন্দ ভ্রমণের জন্য যাবতীয় সকল উপকরণ আনন্দ পার্ক রিসোর্টে পাবেন। এখানে বাচ্চাদের বিনোদন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বড়দের জন্য উপভোগ্য সকল পরিবেশ রয়েছে। চলুন দেখে নেই আনন্দ পার্ক রিসোর্টে গিয়ে আপনি কী কী করতে পারেন।

১. পার্কে ঘোরাঘুরি

মূলত আনন্দ পার্ক রিসোর্ট ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণই হলো পার্কে ঘোরাঘুরি করা। পার্কের প্রতিটি আনাচে কানাচে চমৎকার ডেকোরেশন আপনাকে প্রতিনিয়ত অবাক করবে। বিভিন্ন ধরনের দেশি বিদেশি ফুল ও ফলের গাছে সুসজ্জিত পার্ক।

মাঝে মাঝে আছে শপু পাখির ভাষ্কর্য, চমৎকার লেন, লেনের পাসে বসার জন্য বেঞ্চ, মাঝে মাঝে ছোট ছোট কুটির। পার্কের মধ্যে আছে সুবিশাল মাঠ। পিকনিক স্পট ভাড়া নিলে এখানে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করতে পারবেন।

২. সুইমিং পুল

রিসোর্টের সুইমিং পুলটি খুবই আধুনিক ডিজাইনের আর পানিও বেশ পরিষ্কার। সুইমিং পুলে সাতার কেটে কাটিয়ে দিয়ে পারবেন অনেক সম। পুলের চারপাশের ডেকোরেশনও করা হয়েছে খুব নান্দনিক। এখানে ফটোশুট করলেও দারুন হবে। তবে শুধুমাত্র কটেজ গেস্ট ও বুকিং গেস্টদের জন্য সুইমিং পুল ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।

৩. মাছ ধরা

রিসোর্ট সংলগ্ন বিলে ছিপ ফেলে মাছ ধরার ব্যবস্থা রয়েছে৷ যাবতীয় সরঞ্জাম রিসোর্টেই পেয়ে যাবেন৷ তাহলে পার্কে ঘোরার পাশাপাশি একটি ফিশিং এডভেঞ্চারও হয়ে যাবে। বিলে কিন্তু ছোট বড় অনেক মাছ রয়েছে। তাই যারা ফিশিং পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ।

৪. বিভিন্ন ধরনের রাইডস

পার্কের মধ্যে বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইডস রয়েছে। দোলনা, স্লিপারের মতো ছোটখাটো রাইডস এর পাশাপাশি অন্যান্য এডভেঞ্চার মূলক রাইডসও রয়েছে। এখানে বাচ্চারা আনন্দের সাথে পুরো একটা দিন কাটিয়ে দিতে পারবে।

৫. থ্রিডি মুভি থিয়েটার

রিসোর্টের মধ্যে একটি থ্রিডি থিয়েটার আছে। চাইলে এই থিয়েটারে ঢুকে একটি কল্প বাস্তব জীবনে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতে পারবেন। তবে যাদের হার্ট দূর্বল কিংবা অল্পতেই ভয় পায় তাদের থিয়েটারে না ঢোকাই ভালো।

সব মিলিয়ে বলা যায় আনন্দ পার্ক রিসোর্ট আপনার ভ্রমণকে পুরোপুরি আনন্দে ভরিয়ে দিতে পারবে। রিসোর্টের নামের সাথে কার্যক্রমের পুরোপুরি মিল রয়েছে এটা স্বীকার করতেই হবে।

আশাকরি কালিয়াকৈর এর আনন্দ পার্ক রিসোর্ট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন৷ একটি সুন্দর পরিকল্পিত ভ্রমণের জন্য শুভকামনা রইল। আপনার অবকাশ ভ্রমণ সুন্দর হোক। ধন্যবাদ।

ছবি তাদের পেজ থেকে নেওয়া। ক্রেডিট তাদের।

Scroll to Top